হযরত ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)

মিলে কা‘বা গৃহ নির্মাণ করেন।[3]

প্রথম বিশুদ্ধ আরবী ভাষী :

ইসমাঈল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

أَوَّلُ مَنْ فَتَقَ لِسَانَهُ بِاْلعَرَبِيَّةِ الْبَيِّنَةِ إِسْمَاعِيْلُ وَهُوَ ابْنُ اَرْبَعَ عَشَرَةَ سَنَةٍ-

‘সর্বপ্রথম ‘স্পষ্ট আরবী’ ভাষা ব্যক্ত করেন ইসমাঈল। যখন তিনি ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সের তরুণ’।[4] এখানে ‘স্পষ্ট আরবী’ অর্থ ‘বিশুদ্ধ আরবী ভাষা’ (العربية الفصيحة البليغة) এটাই ছিল কুরায়শী ভাষা (لغة قريش ), যে ভাষায় পরে কুরআন নাযিল হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সকল ভাষাই আল্লাহ কর্তৃক ইলহামের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ইসমাঈল ছিলেন বিশুদ্ধ কুরায়শী আরবী ভাষার প্রথম ইলহাম প্রাপ্ত মনীষী। এটি ইসমাঈলের জন্য একটি গৌরবময় বৈশিষ্ট্য। এজন্য তিনি ছিলেন ‘আবুল আরব’ (أبوالعرب) বা আরবদের পিতা।

অন্যান্য নবীগণের ন্যায় যদি ইসমাঈল ৪০ বছর বয়সে নবুঅত পেয়ে থাকেন, তাহ’লে বলা চলে যে, ইসমাঈলের নবুঅতী মিশন আমৃত্যু মক্কা কেন্দ্রিক ছিল। তিনি বনু জুরহুম গোত্রে তাওহীদের দাওয়াত দেন। ইস্রাঈলী বর্ণনানুসারে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন’।[5] কা‘বা চত্বরে রুকনে ইয়ামানীর মধ্যে তাঁর কবর হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। তবে মক্কাতেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, এটা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়।

ইসমাঈলের বড় মহত্ত্ব এই যে, তিনি ছিলেন ‘যবীহুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর রাহে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী এবং তিনি হ’লেন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মহান পূর্বপুরুষ। আল্লাহ তাঁর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন। তাঁর সম্পর্কে ইবরাহীমের জীবনীতে আলোচিত হয়েছে।

যবীহুল্লাহ কে?

উক্ত বিষয়ে মূলত: কোন মতভেদ নেই। কেননা মুসলিম ও আহলে কিতাব প্রায় সকল বিদ্বান এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। কেননা তিনিই ইবরাহীমের প্রথম পুত্র এবং হাজেরার গর্ভে জন্ম। তিনি মক্কাতেই বড় হন। সেখানেই বসবাস করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। কুরবানীর মহান ঘটনা মক্কাতেই ঘটে। তিনি কখনোই কেন‘আনে আসেননি। পিতা ইবরাহীম তাকে নিয়ে মক্কায় কা‘বা গৃহ নির্মাণ করেন।

পক্ষান্তরে ইসহাকের জন্ম হয় কেন‘আনে বিবি সারাহর গর্ভে ইসমাঈলের প্রায় চৌদ্দ বছর পরে। শৈশবে তিনি মক্কায় এসেছেন বলে জানা যায় না। পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারায় ১৩৩,৩৬, ৪০; সূরা আলে ইমরান ৮৪, নিসা ১৬৩, ইবরাহীম ৩৯, ছাফফাত ১০০-১১৩ আয়াতগুলিতে সর্বত্র ইসমাঈলের পরেই ইসহাক ও ইয়াকূবের আলোচনা এসেছে। এব্যাপারে সকল ইস্রাঈলী বর্ণনা একমত যে, ইসমাঈলের জন্মের সময় ইবরাহীমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। পক্ষান্তরে ইসহাক জন্মের সময় ইবরাহীমের বয়স ছিল অন্যূন ১০০ বছর এবং সারাহর বয়স ছিল অন্যূন ৯০ বছর।

নিঃসন্তান ইবরাহীম বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট একটি ‘নেককার সন্তান’ প্রার্থনা করেছিলেন। যেমন رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ، فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান কর।’ ‘অতঃপর আমরা তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।’ (ছাফফাত ৩৭/১০০-০১)। আর তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান ইসমাঈল। অতঃপর ইসমাঈলের কুরবানীর ঘটনা শেষে যখন ইবরাহীম কেন‘আনে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন সেখানে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। যারা লূত-এর কওমকে ধ্বংস করতে যাওয়ার পথে তাঁর বাড়ীতে যাত্রা বিরতি করেন এবং সারাহর গর্ভে ইসহাক জন্মের ও তার ঔরসে পরবর্তীতে ইয়াকূব জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন (হূদ ১১/৭১)। সূরা ছাফফাত ১০১ আয়াতে ইবরাহীমকে একটি ধৈর্য্যশীল সন্তানের সুসংবাদ শুনানোর পরে কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা শেষে ১১২ আয়াতে বলা হয়েছে وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيّاً مِّنَ الصَّالِحِينَ ‘অতঃপর আমরা তাকে ইসহাক জন্মের সুসংবাদ দিলাম যিনি নবী হবেন ও সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত হবেন’ (ছাফফাত ৩৭/১১২)। উক্ত আয়াতগুলির বর্ণনা পরম্পরায় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, প্রথম সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তানটি ছিলেন ইসমাঈল, যাকে কুরবানী করা হয়। অতঃপর সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তান ছিলেন ইসহাক। যেমন ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দো‘আ করেন الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَاء- ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দান করেছেন ইসমাঈল ও ইসহাককে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অবশ্যই দো‘আ কবুলকারী’ (ইবরাহীম ১৪/৩৯)। এখানে তিনি ইসমাঈলের পরে ইসহাকের নাম উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত আলোচনায় একথা স্পষ্ট হয় যে, যবীহুল্লাহ ছিলেন ইবরাহীমের প্রথম সন্তান ইসমাঈল।

এক্ষণে পূর্বের ও পরের যে সকল বিদ্বান ইসহাককে যবীহুল্লাহ বলেছেন, তারা মূলতঃ ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহের উপর নির্ভর করেছেন। যার প্রায় সবগুলিই কা‘ব আল-আহবারের বর্ণনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই ইহুদী পন্ডিত হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাওরাত বিশেষজ্ঞ হিসাবে খ্যাত এই ব্যক্তি নানা বিকৃত বর্ণনা পরিবেশন করেন। এটা ছিল আরবদের প্রতি ইহুদীদের চিরন্তন বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কেননা ইসমাঈল ছিলেন আরব জাতির পিতা। যিনি হেজাযে বসবাস করতেন। আর তার বংশেই এসেছিলেন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পক্ষান্তরে ইসহাক ছিলেন ইয়াকূবের পিতা। যিনি কেন‘আনে বসাবস করতেন। আর ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ইস্রাঈল। যার দিকেই বনু ইস্রাঈলকে সম্বন্ধ করা হয়। ফলে হিংসুক ইস্রাঈলীরা আরবদের সম্মান ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করতে চেয়েছে এবং ইসমাঈলের বদলে ইসহাকের নাম যবীহুল্লাহ বলে প্রচার করেছে। যা স্রেফ মিথ্যা ও অপবাদ মাত্র।[6] [1]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৭৯ পৃঃ।

 মীনার “ মর্মান্তিক ঘটনার থেকে আমাদের শিক্ষনীয় কি আছে ???

বি:দ্র: –ঘটনার সর্বনিম্নে শিক্ষনীয় বিষয়সমূহ বর্নিত হলো। সমস্ত ঘটনা পাঠ করলে তবে সারমর্ম বুঝতে সক্ষম হবেন ইনসআল্লাহ ।

মক্কার অদূরে অবস্তিত ইসলামের একটি অনন্য ঐতিহাসিক স্থান “ মীনা “। সেখানে অনেক নবী রাসুলগনের ইতিহাস বিজরীত পবিত্র স্থান। যেখানে সম্মানীত হাজী সাহেবান গন প্রতি বছর হজ্জ পালনার্থে গমন করেন। মীনায় অবস্থান হাজীগনের জন্য ওয়াজিব। যে ইতিহাসের স্মৃতি বিজরীত মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমগ্র মুসলিম জাতীর জন্য প্রতি বছর ওয়াজিব হিসাবে কেয়ামত পর্যন্ত পালনীয় ঘটনাবলী। কিন্ত কেন উহার ইতিহাস জানাকি প্রয়োজন নয় ? আসুন তাহলে আসা যাক মূল ঘটনায়। এক দুই বছর নয় ।দীর্ঘ হাজার হাজার বছর পূর্বেকার ঘটনার সমাহার সেখানে। আল্লাহ পাকের খলিল হযরত ইব্রাহীম আ: এর সময়কার মর্মান্তিক ঘটনা। বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহীম আ: কে একজন পুত্র সন্তান দান করেন যার নাম হযরত ইসমাঈল আ:। তখন তিনি যুবক । আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহীম আ: কে স্বপ্নের মাধ্যমে জানালেন হে আমার হাবীব, আপনি আপনার প্রিয় বস্তুকে আমার নামে কোরবানী করুন। স্বপ্র দেখে হযরত ইব্রাহীম আ: প্রথমে ১০০ বকরী কোরবানী করলেন। কিন্ত কবুল হলোনা তার সেই কোরবানী। পূনরায় আল্লাহ পাক স্বপ্নে তার প্রিয় জিনিস কোরবানীর নির্দেশ দেন। পূনরায় হযরত ইব্রাহীম আ: ১০০ উঠ কোরবানী দেন। কিন্ত কোরবানী কবুল হলো না। আল্লাহ পাক পূনরায় স্বপ্নের মাধ্যমে জানালেন হে আমার হাবীব , আপনি আপনার অন্তরের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানী দিন। এবার হযরত ইব্রাহীম আ: আল্লাহ পাকের এরাদা বুঝতে পারলেন। তার অন্তরের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলো হযরত ইসমাঈল আ:। আল্লাহ পাক তাকে কোরবানীর জন্যই নির্দেশ দিয়েছেন। পরদিন সকালে ইসলাঈল আ: এর মা হযরত হাজেরা আ: কে বললেন , তোমার ছেলেকে সাজিয়ে দাও , দাওয়াত খেতে নিয়ে যাব। স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ মোতাবেক, ছেলে ইসমাঈল আ: কে সাজিয়ে দিলেন। বাবা হযরত ইব্রাহীম আ: প্রানের প্রিয় ছেলে ইসমাঈল আ: কে নিয়ে রওয়ানা হলেন । সাধে গোপনে অতি ধাড়ালো ছুড়ি নিলেন হযরত ইব্রাহীম আ:। রওয়ানা হওয়ার সাথে সাথে মানুষের চরম শত্রু মি: শয়তান আল্লাহ পাকের হুকুম যাতে না মানতে পারে তজ্জন্য ধোকা দেয়া শুরু করলো । প্রথমে হযরত হাজেরা আ: কে মাসুষ বেষে ধোকা দিল। বললো হাজেরা তোমার ছেলেকে তুমি সাজিয়ে দিলে। কিন্ত তোমার স্বামী তার ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা তুমি জান ? হাজেরা আ: জবাব দিলেন , দাওয়াত খেতে। শয়তান ধোকা দিল । না । তাকে জবেহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। হাজেরা আ: বললেন, তা কিছুতেই হতে পারে না। কারন হযরত ইব্রাহীম আ: তার সন্তানকে অত্যন্ত ভালবাসে। সে জবেহ দিতে পারে না। তার এই যুক্তি খন্ডনের জন্য সত্য কথাই বলতে বাধ্য হলো শয়তান। বললো আল্লাহ পাকের হুকুম হয়েছে । তাই তাকে জবেহ করতে নিয়ে যাচ্ছে। হযরত হাজেরা অ: এবার বুঝতে পারলেন যে , এটি তাহলে শয়তান । আল্লাহ পাকের হুকুম হলেতো অবশ্যই তা কার্যকরী হবে। তাই শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা পাবার জন্য তিনি শয়তানকে লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ করেন। শয়তান এখানে কৃতকার্য না হয়ে তার ধোকার স্বধনানা থেকে বিরত হয়নি। তার দ্বিতীয় চক্রান্ত শুরু হলো হযরত ইসমাঈল আ: এর উপর। এবার পিছন থেকে হযরত ইসমাঈল আ: কে ধোকা দিয়ে বলতে শুরু করলো । হে ইসমাঈল তোমাকে তোমার বাবা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জান ? তোমাকে জবেহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। ইসমাঈল আ: বললেন তা কিকরে সম্ভব ? আমার পিতা আমাকে এত ভালোবাসে ! তিনি কখনো এমন কাজ করতে পারেন না। শয়তান বললো , আল্লাহ পাকের হুকুম হয়েছে তোমাকে জবেহ করার। হযরত ইসমাঈল আ: বিষয়টি বুঝে ফেললেন। তাহলে এ শয়তান । আল্লাহ পাকের হুকুম হলে আমি তাতে রাজি। তিনিও শয়তানকে লক্ষ করে পাথর নিক্ষে করলেন শয়তানের ধোকা থেকে হেফাজত হবার জন্য। মো ও পুত্রের শয়তানের ধোকা থেকে হেফাজত হবার জন্য পাথর নিক্ষেপ আল্লাহ পাকের নিকট এত পছন্দ হলো যে উহা কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত হাজীগনের জন্য পাথর নিক্ষেপ ওয়অজিব করে দিয়েছেন। পিতা পুত্র সামনের দিকে এগুতে লাগলো। এক পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে এবার হযরত ইব্রাহীম আ: আল্লাহ পাকের নির্দেশের কথা তার ছেলে হযরত ইসমাঈল আ: এর নিকট প্রকাশ করলেন যে, আল্লাহ পাক তোমাকে জবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুনে হযরত ইসমাঈল আ: বললেন , বাবা আপনি আল্লাহ পাকের হুকুম পালন করুন । আমাকে সবরকারীগনের মধ্যে পাবেন। কি সুন্দর জবাব পুত্রের। পিতা পুত্রকে জবেহ করবে। তার জবাবে এমন বর্ননাতীত, বিরল জবাব কেয়ামত পর্যন্ত কোন সন্তান পিতাকে কি দিবে ? শুধু তাই নয় ? যুবক পুত্র বৃদ্ধা পিতাকে পরামর্শ দিতেছে। পিতা জবেহ করার পূর্বে আপনার চোখ দুটো ভালো করে বেধে নিন। যাতে করে জবেহ করার সময় যদি আমার চেহার দেখেন তাহলে মায়ার বশে আল্লাহ পাকের হুকুম পালনে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে আল্লাহ পাক নারাজ হবেন। অার আমার হাত পা শক্ত করে বেধে নিন যাতে করে আমি জবেহ করার সময় নড়াচড়া করতে না পারি। যদি আমার হাত পা খোলা থাকে তাহলে নড়াচড়ায় যদি আমার হাত পা আপনার গায়ে লেগে যায় তাহলে সেই বেয়াদবীর জন্য কাল হাশরের ময়দানে আমি আল্লাহ পাকের নিকট কি জবাব দিব ? কত খোদাভীতি, নম্রতা, শীষ্টাচার, ভদ্রতা, সহনশীলতা, পিতা ও আল্লাহ পাকের প্রতি আনুগত্যতা দেখিয়েছেন ছোট যুবক যার সমকক্ষ প্রমান দন্ডায়মান করা সম্ভব হবেনা কেয়ামত পর্যন্ত। পিতা পুত্রের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ শুরু হলো। পিতা পুত্রের হাত পা শক্ত করে বেধে নিলেন। নিজের চোখ দুটিও বেধে নিলেন। এবার হাতে ধা[ড়ালো ছুড়ি নিলেন। পুত্রকে জবেহের কাজ শুরু করিলেন। একজন নবীর গায়ে ৪০ জন সাঘারন মানুষের শক্তি আল্লাহ পাক দান করে থাকেন। সেই পূর্ন শক্তি দিয়ে পুত্রের গলায় ছুড়ি চালালেন। কিন্তু ফলাফল বিপরীত। ধাড়ালো ছুড়িতেও ইসমাঈল আ:: এর গলা তো দুরের কথা একটি পশমও কাটলো না। এইভাবে একবার নয় দুইবার নয় তিন বার চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে রাগ করে ছুড়ি নিক্ষেপ করলেন। সেই একই ছুড়ি দ্বারা শক্ত পাথর দ্বিক্ষন্ডিত হলো কিন্ত ইসমাঈল আ: জবেহ হলেন না। কারন যখন হযরত ইব্রাহীম আ: যখন হযরত ইসমাঈল আ: কে জবেহ শুরু করছিলেন । তখন সবকিছুই আল্লাহ পাক নিজেই পর্যবেক্ষন করছিলেন। তিনি ছুড়িকে হুকুম করে দিলেন ইসমাঈল আ: একটি পশমও যেন না কাটে। ছুড়িও আল্লাহ পাকের মাখলুক । আল্লাহ পাকের হুকুম মানে । তার হুকুম ব্যতীত ছুড়িরও কাটার কোন শক্তি নেই। সেই একই ছুড়িতে পাথর দ্বিখন্ডিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ পাক পিতা ও পুত্রের এ্ই কোরবানীকে কবুল করে নিলেন। এবং হযরত জিব্রাঈল আ: কে হুকুম দিলেন। আমার হাবীব আমার পরীক্ষায় পাশ করেছে। জলদীি করে হযরত ইসমাঈল আ: কে সরাইয়া সেখানে জান্নাত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে শুইয়ে দাও। যেমন হুকুম তেমন কাজ। দুম্বা জ;বেহ হয়ে গেল। গরম রক্ত হাতে লাগতেই হযরত ইব্রাহীম আ: শোকরীয়া আদায় করে চোখের বাঁধ খুললেন। দেখলেন যে, পুত্র পাশে দাড়ানো, দুম্বা জবেহ হয়ে গিয়েছে। তিনি পুনরায় পুত্রকে জবেহ করার জন্য ধরলেন। এদিকে আল্লহ পাক জানিয়ে দিলেন। হে আমার খলিল ,আপনি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। আমি কোরবানী দুম্বা দিয়ে কবুল করে নিলাম আপনার ইসমাঈলকে আপনার নিকট ফিরাইয়া দিলাম। আল্লাহ পাক বান্দার থেকে কোরবানী চান কিন্ত নেন না। এই ঘটনা সমস্ত মুসলিম জাতীর জন্য ওয়াজেব করে দিলেন। প্রতি বছর ঈদুল আযহায় মুসলমানদের জন্য ওয়াজেব আল্লাহ পাকের জন্য এই কোরবানী দেয়া। তারপর থেকে হজ্জের সময় শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ ও কোরবানী দেয়া হাজী সাহেবানগনের জন্য ওয়াজেব করে দিলেন আল্লাহ পাক। আমাদের মহানবী সা: হ্জ্জ পালনের সময় তা্ই করেছেন। এবং হযরত আবু বকর রা: কে নিয়ে এই মীনায় কাফেরদের গোত্রে গোত্রে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।

এই ঘটনার থেকে সমস্ত মুসলিম জাতি ও সমগ্র বিশ্ব মানব জাতির যা শিক্ষনীয় তা হলো :

(১) মানুষের অন্তরের মধ্যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোন মাখলুকের মহব্বত বা ভালোবাসা থাকতে পারবে না। যা শিরক এর পর্যায়ে । আল্লাহ পাক তা পছন্দ করেন না । তাই এই কোরবানীর নির্দেশ দিয়েছেন দিল থেকে ইসমাঈলের মহব্বত বেড় করার জন্যই। আমাদেরও কর্তব্য আমাদের দিল থেকে দুনিয়ার সব রকম মহব্বত বেড় করে একমাত্র আল্লাহ পাকের মহব্বত বসানো।
(২) শয়তানের ধোকা থেকে মানুষকে হেফাজতের সার্বিক ব্যবস্তা নিতে হবে।
(৩) আল্লাহ পাকের সন্তস্টির জন্য নারী ,পুরুষ ও যুবক সকলকে দ্বীনের জন্য কোরবানী উঠাতে হবে তাহলে আল্লাহ পাকের দ্বীন দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হবে। যেমনটি করেছেন হযরত পিতা ইব্রাহীম আ:, নারী হযরত হাজেরা আ: এবং পুত্র/যুবক হযরত ইসমাঈল আ:।
(৪) ছুড়ি বা সমস্ত মাখলুকের কোনই শক্তি নেই কাটার বা কোন কিছু উপকার বা অপকার পৌছানোর আল্লাহ পাকের হুকুম ব্যতীত। তাই আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে হবে দুনিয়ার কোন বস্তুই আমাদের উপকার অপকার করতে পারে না আল্লাহ পাকের হুকুম ব্যতীত।
(৫) আল্লাহ পাকের হুকুম মানতে গিয়ে পুত্র পিতার প্রতি যে শ্রদ্ভাবোধ , সম্মান, ধৈর্য্য, উত্তম আদর্শ দেখিয়েছেন তা কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত সন্তানের জন্য পালনীয়।
(৬) আল্লাহ পাক বান্দাকে পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা চান কিন্ত নেন না।
আরো অনেক শিক্ষনীয় বিষয় এই ঘটনার মধ্যে নিহীত আছে জ্ঞানী লোকের জন্য। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সহিহ বুঝ ও নেক অামল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews