খাওয়ার আদব বা খানা খাওয়ার কতিপয় সুন্নত

খাওয়ার আদব ও সুন্নত

১. জুতা খুলে খাবার খাওয়া। কেননা তার মধ্যে বেশী আরাম রয়েছে। এমন নয় যে, জুতা পরে খাওয়া যাবেনা এবং গুনাহও নয়।
২. উভয় হাত কব্জী পর্যন্ত ধৌত করে খাওয়া।
৩. কুলি করা সুন্নত, যদি প্রয়োজন হয়।
৪. একজন আল্লাহর মুখাপেক্ষী বান্দার মত বসে খাওয়া। হাদীসে আছে (নবী সঃ) বাম পা উঠিয়ে, ডান পায়ের উপর বসতেন। অপর এক হাদীসে আছে নবী (সঃ)উভয় পা উঠিয়ে বসার কথা উল্লেখ আছে। এছাড়া উলামায়ে কেরাম থেকে বসার আরো দুটি পদ্ধতি বর্ণিত আছে, এক, উভয় পা বিছিয়ে বসা। দুই, ডান পা উঠিয়ে বাম পায়ের উপর বসা। সারকথা, নম্রতার সাথে বসা।
৫. বিনয়ী অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকে বসে খাওয়া।
৬. জমিনে বসে খাওয়া উত্তম। চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া উত্তম নয়।
৭. খাবার সামনে আসলে এ দোয়া পড়তে হয়।
آللهم بآرك لنآ فيمآ رزقتنآ وقنآ عذآب آنآر.
৮. খাওয়ার শুরুতে এ দোয়া আওয়াজের সাথে পড়া।
بسم آلله وعلى بركة آلله.
যাতে অন্যান্য লোকও শুনে পড়তে পারে। যদি শুরুতে এদোয়া পড়তে ভুলে যায়, তবে যখন মনে পড়বে, তখন এই দোয়া পড়া।
بسم آلله آوله و آخره.
৯. কোনো বস্তুর সাথে হেলান দিয়ে বা ভর করে না খাওয়া। তবে যদি অসুস্থ হয়, তাহলে খেতে পারবে।
১০. ডান হাত দিয়ে খাওয়া। প্রয়োজন হলে বাম হাত দিয়েও খেতে পারবে।
১১. শারীরিক উপকার ও আল্লাহর হুকুম পালনের নিয়্যতে খাওয়া।
১২. তিন আংগুলি দ্বারা খাওয়া সুন্নত। প্রয়োজনে তিনের অধিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৩. কয়েকজন একসাথে এক বর্তনে খায়, আর যদি খাবার একধরনের হয় তাহলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া। অন্য জনের সামনে থেকে না খাওয়া। যদি বিভিন্ন ধরনের হয় অথবা ফল হয় তাহলে প্রত্যেকদিক থেকে খাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
১৪. কতেক আলেম লবন দ্বারা শুরু করা এবং লবনের মাধ্যমে শেষ করা সুন্নত বলেছেন। কিন্তু যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে তাহারা বলেন সে হাদীসটি
موضوع.
১৫. খাবার প্লেট অথবা পাত্রের একপাশ থেকে খাওয়া। মাঝখানে হাত না দেয়া। কেননা মাঝখানে বরকত অবতীর্ণ হয়।
১৬. খেজুর এবং এ জাতীয় খাবার যেমন, বিষ্কুট, মিষ্টি, ইত্যাদি এক সাথে দুটি করে না খাওয়া। বরং একটি করে খাওয়া।
১৭. এক লোকমা শেষ হওয়ার পূর্বে আরেক লোকমা না উঠানো।
১৮. অতিরিক্ত গরম খাবার না খাওয়া।
১৯. গরম খাবার ও গরম পানিতে ফুঁক দিয়ে ঠান্ডা না করা।
২০. যদি লোকমা পড়ে যায় তাহলে উঠাইয়া খাওয়া সুন্নত
২১. খাবারের মধ্যে দোষ না ধরা। যদি রান্নার মধ্যে দোষ ধরে তবে অসুবিধা নাই, খেয়াল রাখতে হবে কারো মনে যেন কষ্ট না যায়।
২২. খাওয়ার সময় এমন কাজ না করা, যার দ্বারা অন্যের কষ্ট হয়।
২৩. খাওয়ার মাঝে এমন কাজে লিপ্ত হবেনা, যার দ্বারা কষ্ট হয়। এবং জুরুরী জিনিষের জন্য কষ্ট হয়।
২৪. অল্প ক্ষুধা বাকি থাকতে খাবার ছেড়ে দেওয়া। এতে করে হজম শক্তি বাড়ে।
২৫. অংগুলি এবং পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া। (মানে চেটে খাওয়া্) কেননা এর দ্বারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি শুকরিয়া প্রকাশ পায়।
২৬. শেষ হওয়ার পূর্বে এই দোয়া পড়া।
آلحمد لله آلذى آطعمنآ وسقآنآ وجعلنآ من آلمسلمين.
২৭. দস্তরখানা বিছাইয়া খাওয়া সুন্নত
২৮. দস্তরখানা উঠানোর পূর্বে নিজে না উঠবেনা।
২৯. দস্তরখানা উঠানোর দোয়া পড়া।
آلحمد لله حمدآ كثيرآ طييبآ مبآ ركآ فيه. غير مستغنى و لا مدع عنه ربنآ.
৩০. খাবার শেষ হলে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া সাবান ইত্যাদি দ্বারা।
৩১. খাবার পর কুলি করা সুন্নত
৩২. দাঁত খিলাল করা।
৩৩. খাবার শেষে হাত ধোয়ার পর হুজুর (সঃ) তার হাত, মুখে মুছে নিতেন।
৩৪. খাবার শেষ করার পর কিছু তেলোয়াত ও জিকির করা।
৩৫. খাবার শেষ করার সাথে সাথে শুইবেনা। তাতে অন্তর শক্ত হয়ে যায়।
৩৬. দাওয়াত বা অন্যের ঘরে খাইলে এই দোয়া পড়া।
آللهم آىطعم من ىطعمنى وآسق من سقآ نى.
৩৭. একই মজলিসে কয়েকজন খেতে বসলে, যার খাওয়া শেষ, সে আগে না উঠা। এতে করে অপর জনের খেতে সমস্যা হয়।
৩৮. খাওয়ার আগে সামান্য পানি পান করা।
তিরমিজি ছানী ২য়ঃ-প্রথম কয়েক পরিচ্ছেদ থেকে একত্রিত
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই সমস্ত সুন্নতের উপর আমল করার তৌফিক দিন।
ও সহজ করে দিন। আর আমাদের ছোট ছোট আমল গুলো কবুল করে নিন।

পানাহার/ খাবারের সুন্নত
হে বৎস ! বিস্মিল্লাহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও ! আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো অংশ থেকে খাওসহীহ, বুখারীঃ ৪৯৫৮
শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে বিস্মিল্লাহ বলা হয়নি- সহীহ মুসলিমঃ ৩৭৬১
যদি তোমার খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তা থেকে ময়লা দূর করে তা খেয়ে ফেলবে; শয়তানের জন্য রেখে বে না- সহীহ, মুসলিমঃ ৩৭৯৪
রাসুল (সা) তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতেন এবং খাওয়া শেষে আঙ্গুল চেটে খেতেন-সহীহ মুসলিমঃ ৩৭৯০
যখন তুমি খাবার খাবে আঙ্গুল চেটে খাও ; কেননা তুমি জাননা কোন আঙ্গুলে বরকত আছে-সহীহ মুসলিমঃ ৩৭৯৩
রাসুল(সা) পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস নিতেন- সহীহ বুখারীঃ ৫২০০
রাসুল (সা) কখনোই কোন খাবারের দোষ বের করে তা নিয়ে কথা বলতেন না। পছন্দ হলে খেতেন,
পছন্দ না হলে রেখে দিতেন- বুখারীঃ ৪৯৮
যে ব্যক্তি খাওয়ার পর আল্লাহ প্রশংসা করে; অনুরূপ পান করার পর আল্লাহ প্রশংসা করে-আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হন-সহীহ মুসলিমঃ ২৭৩৪
রাসুল (সা) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন এবং দাঁড়িয়ে খাওয়া আরো বেশী খারাপ ও দুষণীয়-মুসলিমঃ ৭৭২

(হে মুসলমান জাতি) রাসূল তোমাদিগকে যাহা আদেশ করিয়াছেন তাহা পূর্ণরূপে মানিয়া এবং গ্রহণ করিয়া লও এবং যাহা নিষেধ করিয়াছেন উহা হইতে বিরত থাক (সূরা হাশর, আয়াত:৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন- হে নবী (মুহাম্মদ ) আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা আল্লাহ তাআলা কে ভালোবাসো তবে, তোমরা আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদিগকে ভালোবাসিবেন এবং যাবতীয় গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন; আর আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, বড় করুণাময়। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১) উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে মহানবীর অনুসরণ ও অনুকরণের বদলে এমন দুইটি পুরস্কার ঘোষনা করিয়াছেন, যাহা ব্যতীত জীবনের কোন কল্যাণের এর উপায় নাই। এক আল্লাহ তাআলা তাহাকে মহব্বত করিবেন অপরটি হল, গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন। আর এদুটিই পুরস্কার পাওয়ার পর আর কিছুর প্রয়োজনই বা কিসের।
আল্লাহ তালা ইরশাদ করেন- নিশ্চয়ই রাসূল এর জীবনের মধ্যেই (তাঁহার প্রতিটি কথা ও কাজের মধ্যে) তোমাদের জন্য উত্তম আদেশ নিহিত রয়েছে। আমরা জীবন ধারনের সমস্ত কাজই করিয়া থাকি। কিন্তু রাসূল এর কার্যাবলীর নিয়ম পদ্ধতি ও সহীত তরীকা আমরা জানি না। যদ্দুরণ শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা সমুদয় সুমহান ইত্তেবায়ে সুন্নত হইতে বঞ্চিত হইতেছি। মাঝে মাঝে ইসলামের আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চেষ্টা করি, যদিও নিজে থেকে কিছু লেখার মত ধৃষ্টতা আমার নাই। তাই এই লেখার বিভিন্ন হাদিসের ও ফিকাহের কিতাব হইতে উদ্ধৃতি সহ খাবারের সুন্নত সমূহকে একত্রিত করার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই ক্ষুদ্র মেহনত কে কবুল করুন। আমিন।

নবীজি সব কিছু শিখিয়ে গেছেনঃ আমাদের নবীজি আমাদের বাবা-মার তুলনায় শতগুন বেশি স্নেহশীল ও দয়ালু ছিলেন। নবীজি যেভাবে মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রেখে গেছেন সেভাবে খানাপিনার বিষয়েও তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশন আমাদের জন্য রেখে গেছেন। তিনি খুঁটিনাটি সবকিছু শিখিয়ে গেছেন। যার ফলে তা এবাদতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং তা প্রতিদান ও বিনিময়ের উপলক্ষ হয়ে গেছে।
দস্তরখান ও হাত ধোয়া সম্পর্কেঃ আনাস (রা:) বলেন, নবী করিম কখনও উচু দস্তরখানে বসে এবং রকমারী চাটনি ও হজমির ছোট ছোট পেয়ালার সমাবেশ করে আহার করেননি। তাঁর জন্য পাতলা রুটি পাকানো হয়নি। আমি (ইউনুস) কাতাদা (রা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে তারা কিসের উপর রেখে আহার করতেন। তিনি বলেন চামড়া এই অতি সাধারণ দস্তরখান বিছিয়ে তার উপর। (বোখারী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)
* (খাওয়ার পূর্বে) উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। (ইবনে মাজাহঃ ১/২৩)
ডান হাতে খানা খাওয়া সম্পর্কেঃ মহানবী ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ আহার করে তখন সে যেন তার ডান হাত দিয়ে খায় এবং যখন পানি পান করে, তখন যেন ডান হাতে পান করে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং পানি পান করে। (আবু দাউদ শরীফ)
*বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করাঃ হযরত আবু নুআই বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ এর সামনে কিছু খাদ্য আনা হল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বীয় সৎপুত্র ওমর ইবনে আবু সালমাহ। রাসূলুল্লাহ তাকে বললেন, বিসমিল্লাহ বলে নিজের সম্মুখ দিক থেকে খাও। (বোখারী শরীফ)
*খানার শুরুতে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া। (শামী)
একই রকম খানা হইলে নিজের সম্মুখে হইতে খাওয়া (বোখারীঃ ২/১৮০)
*শিশুদের প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিতঃ হাদিস শরীফে হুজুর এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, বড়দের কর্তব্য হলো, যদি ছোটরা তার সম্মুখ আল্লাহর নাম না নিয়ে খানা শুরু করে দেয়, তাহলে প্রথমে সতর্ক করে দেবে; অত:পর প্রয়োজন হলে হাত ধরে ফেলবে এবং বলবে, আগে বিসমিল্লাহ বলো, তার পর খাও। নবী এই হাদিসটিতে বড়দের শিক্ষা দিলেন যাতে তারা ছোটদের প্রতি নজর রাখে এবং ইসলামী আদব শেখাতে থাকে, নতুবা বরকত থেকে সকলেই বঞ্চিত হয়ে যাবে।
পরিশেষে শয়তান বমি করতে বাধ্য হইলোঃ মাইয়্যা ইবনে মাখশী (রা:) যিনি রাসূলুল্লাহ এর সাহাবী ছিলেন তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি আহার করছিল কিন্তু সে বিসমিল্লাহ বলেনি, অবশেষে খাবারের এক লোকমা যখন বাকি ছিল তখন মনে পড়ল যে সে বিসমিল্লাহ বলেনি এমতবস্থায় সে পড়ল বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ। আর অমনি মহানবী হেসে বলেন: শয়তান তার সাথে খাবার খাচ্ছিল। কিন্তু সে যখন আল্লাহর নাম নিল তখন শয়তানের পেটে যে খাবার গিয়েছিল তা সে বমি করে ফেলে দিল।
বড় বা কোন শ্রদ্বেয় ব্যক্তি আগে খাওয়া শুরু করবেঃ হযরত হুরায়রা (রা:) বলেন, আমরা যখন হুজুর এর সঙ্গে খাওয়ার শরিক হতাম তখন আমাদের নিয়ম এই ছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত নবীজি আহার শুরু না করতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খাদ্যের দিকে হাত বাড়াতাম না, বরং আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকতাম, অতঃপর যখন তিনি খানা শুরু করতেন তখন আমরা শুরু করতাম। এই হাদিসটি থেকে ফেকাহ শাস্ত্রবিদগণ এই মাসআলাটি চয়ন করেছেন যে, ছোটরা তখন বড়দের সাথে খেতে বসবে, তখন আদবের দাবি হলো, প্রথমেই ছোটরা শুরু করবে না, বরং বড়দের শুরু করার অপেক্ষা করবে।
খাওয়ার বৈঠক সম্পর্কেঃ সমগ্র হাদিস ভান্ডার থেকে ওলামাগণ, যা কিছু পেয়েছেন তা এই যে, দোজানু বসে খাওয়া সর্বোত্তম; কেননা তাতে সর্বাধিক বিনয় পাওয়া যায়। আমাদের বুজর্গগণ বলেন এক হাঁটু উচিয়ে আর এক হাঁটু বিছিয়ে বসাও দোজানু বসার অনুরূপ- এটিও বিনয়াবনত বৈঠক। আর এভাবে বসার মধ্যে দুনিয়ারও উপাকার আছে আখিরাতেরও উপকার আছে। মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে যে, চার জানু বসে যাওয়া জায়েজ নেই। এটা ভুল ধারনা। খাওয়ার সময় চার জানু হয়ে বসাও জায়েয আছে। কিন্তু এই বৈঠক বিনয়ের অত কাছাকাছি নয় যত কাছাকাছি পূর্ববর্তী দুবৈঠক। পায়ের পাতায় ভর করে বসে খাওয়া সম্পর্কে নবীজি এর যে বৈঠকের কথা প্রসিদ্ধ আছে তা সঠিক নয়। আমি এরূপ কোন হাদীস খুজে পাইনি।
*জুতা খুলিয়া খানা খাওয়া (দারামী শরীফঃ ১/৫৪২)
একই রকম খানা হইলে নিজের সম্মুখ হইতে খাওয়া (বোখারীঃ ২/৮১০)।
*হেলান দিয়ে বসে আহার করা মাকরুহঃ আবু জুহাইফা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি বলেছেন আমি কখনো হেলান দিয়ে খাইনি। (বোখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমীযি, ইবনে মাজাহ)
*তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া সুন্নাতঃ নবীজি এর সাধারণ অভ্যাস ছিল তিন আঙ্গুল দিয়ে খাবার গ্রহণ করা। অর্থাৎ বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা এই তিনটি আঙ্গুল দিয়ে তিনি লোকমা তুলে নিতেন। উলামায়ে কেরাম এই তিনটি আঙ্গুল দিয়ে লোকমা তুলে নেয়ার একটি তাৎর্পয এই বর্ণনা করেছেন। যে, নবীজির যুগ ছিল সহজ, সরল যুগ। আজকালকার মতো অতিরিক্ত ও বিলাসী খাবার ছিল না সে সময়। ফলে তিন আঙ্গুলের যথেষ্ট হতো। চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে, লোকমা যত ছোট হয়ে হজমে তত সুবিধা হবে। কেননা বড় বড় লোকমা দাঁতেপূর্ণরূপে পিষবে না। ফলে তা পাকস্থলিতে গিয়ে হজমের ব্যাঘাত ঘটাবে। সর্বোপরি এতে অল্প ভোজনের অনুশীলন হয়। স্মরণীয় যে, নবীজি কখনো কখনো চার আঙ্গুল দিয়েও খেয়েছেন। এক বর্ণনা পাওয়া যায় তিনি পাঁচ আঙ্গুল দিয়েও খেয়েছেন। এতে প্রয়োজনে চার বা পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার বৈধতা প্রকাশ করাই উদ্দেশ্য। তবে তিন আঙ্গুলযোগে খাওয়াই নবীজির এর স্বাভাবিক অভ্যাস ছিল।
খাওয়ার সময় কথা বলাঃ খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ এবং পেরেশান করে এরূপ কথা, পীড়াদায়ক কথা ও অশ্লীল কথা বলাও মাকরুহ (এহ্ইয়াউল উলূম)
একত্রিত হয়ে খানা খাওয়াঃ একবার মহানবী এর সাহাবীগণ বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল আমরা খাবার খাই কিন্তু পরিতৃপ্ত হই না। তিনি বলেনঃ হয়তো তোমরা পৃথক পৃথক ভাবে খাবার খায়। তাঁরা বলেনঃ হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তোমরা একত্রিত হয়ে খাবার খাবে এবং বিসমিল্লাহ বলবে, এতে তোমাদের খাবারে বরকত হবে। ইমাম আবু দাউদ (রা:) বলেনঃ কোন দাওয়াতে তোমাদের সামনে যখন খাবার রাখা হবে, তখন মেজবানের অনুমতি ছাড়া খাবে না। (আবু দাউদ শরীফ)
খাদ্যগ্রাস (লোকমা) নিচে পড়ে গেলেঃ নবী করিম বলেন, তোমাদের কেউ খাদ্য গ্রহণের সময় তার গ্রাস পড়ে গেলে সে যেন সন্দেহজনক বস্তু (ময়লা) দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। (বোখারী, তিরমিযী)
খাদ্যের দোষ না ধরিঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, হুজুর কখনও কোন খাবারের দোষ ধরেননি, আর কখনো কোন খাবারকে খারাপ বলেননি। তাঁর যদি ইচ্ছা হতো তাহলে তিনি খেয়ে নিতেন, ইচ্ছা না হলে রেখে দিতেন। খাবারটা যেমনই হোক না কেন, আমার তা পছন্দ হোক বা না হোক, আল্লাহ তাআলার দান করা রিজিকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আমাদের উপর ওয়াজিব। (বোখারী)
আঙ্গুল ও বর্তন চেটে খাওয়া সুন্নতঃ নবী করিম আঙ্গুল ও বর্তন চেটে খেতে আদেশ করেছেন আর তিনি বলেছেনঃ তোমরা জান না খাদ্যের কোন অংশ বরকত আছে। (মুসলিম শরীফ)
নবীজি প্রথমে মধ্যমা, অত:পর তর্জনী এবং সর্বশেষ বৃদ্ধাঙ্গলী চেটে খেতেন। লক্ষনীয় যে, কেউ যদি আঙ্গুল চেটে না খায় তাহলে তার কোন গোনাহ হবে না। তবে সুন্নতের বরখেলাফ হওয়ার কারণে বরকত থেকে বঞ্চিত অবশ্যই হবে।
খাওয়ার পর উভয় হাত ধোয়া এবং কুল্লি করা সম্পর্কেঃ নবীজি ফরমায়েছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থান শয়ন করে যে, তার হাতে তরকারি বা গোশতের ঝোল লেগে থাকে এবং সে তা ধৌত না করে এবং এর ফলে যদি তার কোন ক্ষতি হয়, তবে তার উচিত হবে নিজেকে দোষারোপ করা।(দাউদ শরীফ)

খানা খাওয়ার পর উভয় হাত ধোয়া সুন্নত (ইবনে মাজাহঃ ১/২৩৪)।

খানা খাওয়ার পর কুল্লি করা (বোখারী শরীফ: ২/৮২০)।

খাওয়ার পর দোয়া পড়া দ্বারা ছগীরা গোনাহ মোচন হয়ঃ নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি আহার করে সে যেন বলে, আল হামদু লিল্লাহিল্লাযী আতআমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি খাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়্যাতিন তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহঃ ১/২৩৬)।
ছোট্ট একটি আমল কিন্তু তার বদলা বা বিনিময় কতই নাহ বড়, ইহা আল্ল্হার অনুগ্রহ ছাড়া আর কি?
দস্তরখান ওঠাবার সময় দোয়া পড়াঃ দস্তরখান ওঠাবার সময় রাসূল এই দোয়া পড়তেন, ‘‘আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান তয়্যিবান মুবারাকান ফীহি গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দাইন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রব্বুনা (বোখারীঃ ২/৮২০)
দস্তরখান ওঠাবারন পর নিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ)

খাওয়ার সময় মেহমান বা ভিক্ষুক এলে তখনঃ রাসূলুল্লাহ বলেছেন, দুজনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। (বোখারী, মুসলিম, তিরমিযী) । মেহমান কিংবা ভিক্ষুককে শুধু এই কারণেই ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না যে, খাবারতো মাত্র একজনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, বরং তখন নবীজির হাদিসটি স্মরণ করে তাকে খাওয়ায় তাকে শরীক করে নিলে আল্ল্হা তাআলা ঐ খাবারে বরকত দান করবেন।

আমাদের সমাজে বর্তমানে প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, নিজের সমমান বা সমমর্যাদা সম্পন্ন হলে তবেই সে আসল মেহমান। আর যে ব্যক্তি অসহায় মুসাফির বা মিসকিন তাকে কেউ মেহমান মনে করে না। অথচ বাস্তব সত্য এই যে, এই ব্যক্তি আল্ল্হা তাআলার পাঠানো মেহমান। এই ব্যক্তির সম্মান করাও প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। সুতরাং খাওয়ার সময় যদি এই প্রকারের মেহমান এসে যায়, তাকেও খাবারে শরীক করে নেয়া উচিত। বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে, তাকে মোটেই খালি হাতে ফেরানো যাবে নাহ। আর তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া সর্বাবস্হায় পরিত্যাগ করতে হবে। কোরানের ভাষায়- কোন প্রার্থীকে কখনো ধমকাবে না

***টীকাঃ * রাসূল হালুয়া / মিষ্টি পছন্দ ভালোবাসতেন। (বোখারী, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী) * নবী করিম কদু পছন্দ করতেন। (বোখারী, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী) * নবী করিম কোন খাদ্য ও পানীয়দ্রব্যে ফুঁ দিতেন না। (ইবনে মাজাহ) * নবী করিম কোন খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে না জানা পর্যন্ত খেতেন না। (বোখারী) * রাসূল সকলের আহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠে যেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ) * দুনিয়াবাসী ও বেহেস্তীদের খাবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ খাদ্য হলো গোশত। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ); গোশতের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উত্তম হচ্ছে রানের গোশত। (দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) * যখনই যা খাওয়ার লোভ হয়, তখনই তাই খাওয়াই অপচয় (ইবনে মাজাহ) * রান্নার সময় ঝোল বেশি রাখবে। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, তিরমিযী) * উপুড় হয়ে খাওয়া নিষেধ। (ইবনে মাজাহ) * খেজুরের সাথে একত্রে শসা খাওয়া। (বোখারী, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী) * (কাঁচা) রসূন-পিঁয়াজ খাওয়া মাকরূহ। (বোখারী, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী)


 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews