নামাযের ফজিলত
মহান আল্লাহ পাকের নিকট নামায সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ্
পাকের নিকট নামায অপেক্ষা প্রিয় ইবাদত আর কিছু নাই। আল্লাহ্ পাক মানুষের উপর
দিনরাত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছেন। যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায়
করে তারা পরকালে বেহেশতের উত্তম স্থানে অবস্থান করিবে। এবং যাহারা নামায পড়েনা
তাহারা জাহান্নামের নিকৃষ্টতম স্থানে অবস্থান করিবে।
হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযু করে ভয় ও ভক্তি সহকারে রীতিমত নামায আদায় করে
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাহার সগীরা গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং বেহেশতের উত্তম
জায়গায় স্থান দিবেন।
আর একটি হাদীসে বর্ণিত আছে,
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নামায
ইসলামের খুঁটি স্বরূপ”। অর্থাৎ ঘর যেমন খুটি ছাড়া তৈরী হয় না বা দাঁড়িয়ে
থাকতে পারেনা। ঠিক তেমনি ইসলামরূপ ঘর ও নামায নামক খুঁটি ছাড়া টিকতে পারেনা। যে
ঠিকমত নামায কায়েম করল সে ইসলামকে জারী রাখতে সাহায্য করল। আর যে নামায কায়েম করল
না সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করে দিল।
কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। নামাযী ব্যক্তির
হাত, পা, মুখমন্ডল
কেয়ামতের দিন সূর্যের আলোর মত উজ্জল হবে। কিন্তু বে-নামাযীর এর উল্টা ফল হবে এবং
জাহান্নামী হবে। হাদীসে বর্ণিত আছে, কিয়ামতের ময়দানে
নামাযীগণ নবী, শহীদ ও অলীগণেরর সঙ্গে থাকিবে। এবং
বে-নামাযীরা, ফেরাউন, সাদ্দাদ,
হামান, কারূনের এবং আরও বড় বড় কাফেরদের
সাথে থাকবে।
প্রত্যেক ব্যক্তির নামায পড়া একান্ত প্রয়োজন। নামায না পড়িলে আখেরাতে
এবং দুনিয়ায় প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হইতে হইবে। নামায কাহারও জন্য মাফ নাই। কোন
অবস্থায়ই নামায বাদ দেয়া জায়েয নাই,
রুগ্ন, খোড়া, বধির,
অন্ধ, আতুর, বোবা
যে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই নামায আদায় করতে হবে।
আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন –
قَدْ
اَلفْلَحَ الْمُؤْ مِنُوْنَ الَّذِيْنَ هُمْ صَلَوتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
উচ্চারণ-ক্বাদ আফলাহাল মুমিনুনাল লাজিনাহুম ছালাতিহিম খাশিউন।
হযরত আদম (আঃ) হইতে আরম্ভ করিয়া শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নবী রাসুল আসিয়াছেন তাঁহাদের প্রত্যেকের
উপর এবং তাঁহাদের উম্মতদের উপর নামায পড়া ফরয ছিল। কোন নবীর প্রতি ১০ ওয়াক্ত, কারও প্রতি ৩০ ওয়াক্ত, কারও
প্রতি ৫০ ওয়াক্ত, কারও প্রতি ৪০ ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল।
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন মেরাজে গমন করেন,
তখন আললাহ্ পাক ৫০ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছিলেন এবং পর্যায়ক্রমে
কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। কিন্তু আখেরী জামানার উম্মতগণ ৫ ওয়াক্ত নামায
পড়িলেই ৫০ ওয়াক্ত নামাযের সওয়াব পাইবে। নামায আললাহ্ পাকের একটি উপহার। যাহারা
আললাহ্ পাকের দেয়া এই উপহার অবহেলা করবে বা অবজ্ঞা প্রকাশ করবে তাহারা কখনই আললাহ্
পাকের প্রিয় বান্দা হইতে পারবেনা।
আল্লাহ্ পাক নামাযের ফজিলত সম্মন্ধে কোরআন পাকে বলেছেন —-
وَالَّذِيْنَ
هُمْ عَلَى صَلَوتِهِمِِ يُحَا فِظُوْنَ اُولَئِكَفِىْ جَنَّتِمُّكْرَمُوْنَا
উচ্চারনঃ ওয়াল্লাজিনা হুম আলা ছালাওয়াতিহিম ইউহাফিজুনা উলাইকা ফি
জান্নাতিম মুকরামুন।
অনুবাদঃ যে সমস্ত লোক যত্ন সহকারে নামায আদায় করবে তাহারাই বেহেশতে
যাইবে এবং অশেষ সম্মানের অধিকারী হইবে।
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায যেমন তোমাদের বাড়ীর সামনে দিয়া
প্রবাহিত একটি নদীর মত। তোমরা যদি প্রতিদিন ৫ বার ঐ নদীতে গোসল কর, তবে যেমন তোমাদের শরীরে কোন ময়লা-আবর্জনা থাকতে পারেনা, তেমনি যে ব্যক্তি পাঁচ বার নামায পড়ে কোন প্রকার পাপ তাকে স্পর্শ করতে
পারেনা। নবী পাক (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি ভক্তি সহকারে অজু করে, ভয়
মিশ্রিত ভাবে নামায পড়ে, আল্লাহ্ পাক তাহার জন্য দোযখের
আগুন হারাম করে দেন। কিয়ামতের দিন নামাযই ঐ ব্যক্তিকে দোযখের আগুন হইতে বাঁচাইয়া
বেহেশতে নিয়া যাইবে। নামায পড়ার সময় যদি কপালে ধুলা মাটি ভরিয়া যায় তবে তাহা
পরিস্কার করবেনা। কারণ যতক্ষন না মাটি কপালে থাকে ততক্ষণ আললাহ পাকের রহমত বর্ষিত
হইতে থাকে।
হযরত আদম (আঃ) এর উপর ফজরের নামায, হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর জোহরের নামায, হযরত সোলায়মান (আঃ) এর উপর আছরের নামায, হযরত
ইয়াকুব (আঃ) এর উপর মাগরিবের নামায, এবং হযরত ইউনুছ (আঃ)
এর উপর এশার নামায ফরয করা হয়েছিল। যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত ভক্তি
সহকারে আদায় করবে, সে উপরের পাঁচজন নবী রাসূলের সমান
সওয়াব পাইবে।হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, নবী করীম (সাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে আলাপ করছিলেন। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হইল। তিনি
তখনই উঠিয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার শরীরের রং এবং চেহারা পরিবর্তন হইয়া গেল। তাঁহার ভাব
দেখিয়া আমার মনে হইতেছিল তিনি আমাকে চিনিতে পারিতেছেন না। আমি নবী পাক (সাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে ইহার কারণ জিজ্ঞাস করলে তিনি বলিলেন, হে আয়েশা! ইহা আললাহ পাকের আদেশ প্রতি পালনের সময়। এসময়ে প্রত্যেকের এই
আহবানে ভয় হওয়া উচিত।
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন বান্দা অযু করিয়া জায়নামাযে দাঁড়ায়,
তখন আল্লাহ পাক একজন ফেররেশতাকে পাঠাইয়া তাকে বলিয়া দেন যে,
আমার অমুক বান্দা নামায পড়িবার জন্য প্রস্তুত হইতেছে, কিন্তু তাহার শরীরের পূর্বের পাপরাশি সঞ্চিত আছে। নাপাক জিনিস সাথে করে
নামায পড়িলে তাহার নামায শুদ্ধ হইবে না। তুমি উহার শরীর হইতে সমস্ত পাপ তোমার
মাথায় লইয়া দাঁড়াইয়া থাক। আর আমার বান্দা নিস্পাপ অবস্থায় নামায আদায় করুক।
আল্লাহ্ পাকের আদেশ অনুযায়ী উক্ত ফেরেশতা তাহার সমস্ত পাপ উঠাইয়া নিজের মাথায় লইয়া
দাঁড়াইয়া থাকে। তারপর নামায পড়া শেষ হইলে ফেরেশতা বলে হে আল্লাহ্! আপনার বান্দার
নামায পড়া শেষ হয়েছে। তাহার পাপগুলি এখন তাহার শরীরে ছাড়িয়া দেই। আল্লাহ পাক বলেন,
আমার নাম ‘রাহমানুর রাহিম’
আমি বান্দার শরীর হইতে পাপের বোঝা নামাইয়া আবার যদি সেই বোঝা
তাহাকে চাপাইয়া দেই তবে আমার রাহমান নামের স্বার্থকতা থাকেনা। হে ফেরেশ্তা! আমার এ
বান্দার পাপের বোঝা দোযখে নিক্ষেপ করিয়া জ্বালাইয়া দাও। এখন হইতে আমার এই বান্দা
নিস্পাপ।
একদিন নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাহাবাগণের সহিত বসিয়া
আছেন। এমন সময় একন ইহুদী আসিয়া বলিল,
হে মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ! আপনাকে আমি একটি
প্রশ্ন করব। আপনি যদি তাহার উত্তর দিতে পারেন তবেই বুঝিব যে আপনি সত্যিই আল্লাহ্র
নবী। কেননা কোন নবী ব্যতীত আমার এই প্রশ্নের উত্তর কেহই দিতে পারবে না। তখন নবী
করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিলেন তোমার প্রশ্ন কি? ইহুদী বলিল, আপনার ও আপনার উম্মতের উপর যে
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইহার তত্ত্ব কি? নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে চলিয়া যায় তখন প্রথম আসমানে একদল ফেরেশতা
আল্লাহপাকের ইবাদতে লিপ্ত হয়। ঐ সময় সমস্ত আসমানের দরজা খোলা থাকে। মানুষ ও সমস্ত
ফেরেশতাদের ইবাদত আল্লাহ্ পাকের দরবারে পোঁছায়া যায়। জোহরের সময়ে আল্লাহ্র নিকট
সকল ইবাদত কবুল হয়। আসরের ওয়াক্ত শয়তান ধোকা দিয়া আদম (আঃ) কে আল্লাহ্ পাকের
নাফরমানি করাইয়াছিল। ঐ সময়ে নামাযের আদেশ হওয়ার উদ্দেশ্য হইল, উক্ত সময়ে নামায পড়লে শয়তান কোন প্রকারে ধোকা দিতে পারবেনা। মাগরিবের
ওয়াক্তে হযরত আদম (আঃ) এর তওবা কবুল হইয়াছিল। উক্ত সময়ে নামায পড়িয়া আল্লাহ পাকের
নিকট যে দোয়া করিবে আল্লাহ পাক তাহা কবুল করিবেন। এশা ওয়াক্ত এমনি সময় যখন আমার
পূর্ববর্তী সমস্ত নবীগণের ও তাঁহাদের উম্মত গণের উপর এশার নামায ফরয ছিল। এই নামায
পড়িলে সমস্ত পয়গাম্বরের উপর নির্দিষ্ট নামাযের ছওয়াব পাওয়া যায়। আর ফজরের ওয়াক্তের
মর্ম এই যে, যখন সূর্য উদিত হয় তখন উহা শয়তানের মাথার উপর
দিয়া উদিত হয়। সেই সময় কাফের মোশরেকগণ তাহাদের দেব দেবীদের উদ্দেশ্য করে শয়তানকে
সিজদা করে থাকে। আল্লাহ্ পাক আমাকে এবং আমার উম্মতগণকে উহার পূর্বেই নামায পড়িতে
আদেশ করেছেন। এই কথা শুনিয়া ইহুদী বলিল, আমি বুঝিলাম আপনি
সত্যই আল্লাহ্ নবী। তারপর সেই ইহুদী তার দলবল লইয়া মুসলমান হইয়া গেল।
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি যখন নামাযে দাঁড়াইবে তখন মনে মনে এইরূপ
ধারনা করিবে যে আমি আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড়াইয়াছি। যদিও আমি তাঁহাকে দেখিতেছিনা
কিন্তু তিনি আমাকে দেখিতেছেন।
এক যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) এর পায়ে তীর বিদ্ধ হইয়াছিল। তিনি তীরের
আঘাতের যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া পড়িলেন। অনেক চেষ্টা করিয়াও তীর বাহির করতে পারছেন
না। নামাযের সময় হযরত আলী (রাঃ) নামাযের নিয়ত করলে নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) এর ইশারায় কয়েক জন ছাহাবা সজোরে টানিয়া তীরটি বাহির করিয়া ফেলিলেন। রক্তে
জায়নামায ভিজিয়া গেল। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) ইহার কিছুই টের পেলেন না। নামায শেষে
জায়নামাযে রক্ত দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইহা কিসের রক্ত।
আল্লাহ্ পাকের নিকটতম বান্দাগণের নামায সাধারণতঃ এই রকমই হয়ে থাকে।
নামাযের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। তাই মুসলমান ভাইদেরকে সাবধান করে দিতেছি নামায
ছাড়া পরকালে পার পাওয়া যাবেনা।
নামায না পড়ার শাস্তি
আল্লাহ পাক তাঁর কোরআন পাকে ঘোষনা করেছেন-
فَوَيْلُ
لِّلْمُصَلِّيْنَ الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَوتِهِمْ سَا هُوْنَ
উচ্চারন ঃ ফাওয়াইলুলি্লল মুছালি্লনাল্লাজিনাহুম আনছালাতিহিম ছাহুন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন -জাহান্নাম নামক দোযখে বিরাট
একটি গর্ত আছে তাহার নাম অয়েল। এই জায়গা এতই কঠিন আজাবে পরিপূর্ণ যে, অন্যান্য দোযখীগণ প্রত্যেক দিন সত্তর বার আল্লাহ
পাকের নিকট আরজ করবে, হে আল্লাহ্ তাবারুক তায়ালা! তুমি
আমাদিগকে ঐ অয়েল দোযখ হইতে রক্ষা করিও।
যাহারা নামায পড়িতে আলস্য করে সময়মত নামায পড়েনা, মাঝে মাঝে পড়ে এইরূপ ব্যক্তিদের কেমন শাস্তি্ত
হইতে পারে।
হাদীসে উল্লেখ আছে, প্রতি ওয়াক্ত নামায ছাড়িয়া দেয়ার জন্য আশি ছোকবা দোযখে থাকতে হবে। দুনিয়ার
আশি বৎসর সমান এক ছোকবা হয়। তাহার আশি ছোকবা অর্থৎ ১৬০০ (এক হাজার ছয়শত) বৎসর এক
ওয়াক্ত নামায কাযা করলে দোযখে থাকতে হবে। যাহারা মোটেই নামায পড়েনা এবং নামাযের
প্রতি মিশ্বাসও রাখেনা তাদের অনন্তকাল দোযখে থাকতে হবে।
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলমান এবং কাফেরের মধ্যে পাথক্য এই, মুসলমান নামায পড়ে আর কাফের নামায পড়ে না। কাজেই বেনামাযী কাফেরের
মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। যদি কেহ বলে কিসের নামায, নামায
পড়িয়া কি হইবে, সাথে সাথে সে কাফের হইয়া যাইবে। অনেক লোক
বলে আমরা গরীব মানুষ রুজী রোজগার করতে হয়। নামায পড়ার সময় কোথায়? তাহারা চিন্তা করেনা দুনিয়ার সুখ শান্তি ক্ষণস্থায়ী আর আখেরাতের শান্তি
অনন্তকাল। যাহারা অনন্তকালের সুখ শান্তি নষ্ট করে দুনিয়ায় দুদিনের শান্তির আশায়
থাকে তাহাদের মত আহাম্মক আর নাই। রুজি রোজগার দেয়ার মালিক আল্লাহ পাক। তিনি যদি
অনুগ্রহ করে রুজি না দেন তবে সারা জনম পরিশ্রম করে রুজি পাওয়া যাবে না। আর যদি
আল্লাহ পাক দয়া করে দেন তবে মুহুর্তের মধ্যে তাহাকে সম্পদশালী করিয়া দিতে পারেন।
কাজেই রুজির আসায় নামায পরিত্যাগ করা উচিৎ নয়।
অনেক মেয়ে লোক বলে, ছেলে-মেয়ে নিয়া সংসারের নানা কাজকর্ম করিয়া নামায পড়ার সময় থাকেনা।
আবার বলে আমার নামায পড়ার মত কাপড় চোপর নাই। একখানা মাত্র কাপড় তাও আবার ঠিকমত পাক
পবিত্র করতে পারিনা। নামায পড়ব কেমনে? এই সমস্ত বাজে
অজুহাতের কোন মূল্য নাই আল্লাহ্ পাকের দরবারে। যাহাদের নামায পড়ার আগ্রহ আছে তারা
নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও নামায পড়তে সক্ষম হয়। আর যাহারা নামায পড়বেনা তাহাদের
ওজর আপত্তির সীমা নাই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ পাক যখন নিজে কাজীর আসনে বসবেন। তখন
এই সমস্ত ওজর আপত্তি কোন কাজে আসবেনা।
যারা নামায পড়েনা তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক পনেরটি আজাব নির্দিষ্ট
করিয়া রাখিয়াছেন। পনেরটি আজাবের মধ্যে ছয়টি দুনিয়ায়, তিনটি মৃতু্য সময়, তিনটি
কবরের মধ্যে, তিনটি হাশরের মধ্যে দেয়া হইবে।
Aap-Konsi-Namaz-Parhty-hain
দুনিয়াতে ছয়টি আযাব
১। তাহার জীবনে কোনরূপ বরকত হইবেনা ।
২। আল্লাহ্ তার চেহারা হইতে নেক লোকের চিহ্ন উঠাইয়া লইবেন।
৩ । যে যাহা কিছু নেক কাজ করবে,
তাহার ছওয়াব পাইবেনা।
৪। তাহার দোয়া আল্লাহ্ পাকের নিকট কবুল হইবে না।
৫। আল্লাহ্ পাকের সমস্ত ফেরেশতা তাহার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।
৬। ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত সমূহ হইতে বঞ্চিত করা হইবে।
মৃতু্যর সময় আজাব তিনটিঃ
১। অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া মৃতু্যবরণ করিবে।
২। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃতু্য বরন করিবে।
৩।মৃতু্যকালে তাহার এত পিপাসা পাইবে যে, তাহার ইচ্ছা হইবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করিয়া
ফেলিতে।
কবরের মধ্যে তিনটি আজাবঃ
১। তাহার কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তাহার এক পাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের
সংগে মিলিত হইয়া চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যাইবে।
২। তাহার কবরে, দিনরাত্রি সবসময় আগুন জ্বালাইয়া রাখা হবে।
৩। আল্লাহ্ তাহার কবরে একজন আজাবের ফেরেশ্তা নিযুক্ত করিবেন। তাহার
হাতে লোহার মুগুর থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে, দুনিয়ায় কেন নামায পড় নাই। আজ তাহার ফল ভোগ কর।
এই বলিয়া ফজর নামায না পড়ার জন্য ফজর হইতে জোহর পর্যন্ত, জোহর
নামাযের জন্য জোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছরের নামাযের জন্য
আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাযের জন্য মাগরিব
হইতে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাযের জন্য এশা হইতে ফজর পর্যন্ত লোহার মুগুর দ্বারা
আঘাত করতে থাকবে। প্রত্যেক বার আঘাতের সময় বজ্রপাতের মত শব্দ হইবে এবং শরীর
চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া পঞ্চাশ গজ মাটির নিচে চলিয়া যাইবে। সেই ফেরেশ্তা পুনরায় তাহাকে
জীবিত করিয়া হাড় মাংস এক করিয়া আবার আঘাত করিতে থাকিবে। এই ভাবে কিয়ামত পর্যন্ত লোহার
মুগুর দিয়া তাহাকে আঘাত করতে থাকবে।
হাশরের মাঠে তিনটি আজাবঃ
১। একজন ফেরেশতা তাকে পা উপরের দিকে এবং মাথা নিচের দিকে অবস্থায়
হাশরের মাঠে লইয়া যাইবে। আল্লাহ পাক তাহাকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখবেন না। সে চির
কালের জন্য দোযখী হইয়া নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে থাকবে।
নবী করিম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে আট শ্রেণীর লোকের উপর
কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক অসন্তুষ্ট থাকবেন। তাহাদের মুখের আকৃতি অত্যন্ত কুশ্রী ও
ভীষণাকার হইবে। হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তি তাহাদিগকে দেখিয়া ঘৃণা করিবে। এই কথা
শুনার পরে সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে
সমস্ত লোক কাহারা? নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) বললেন —১। জ্বেনা-কার ২) অবি-চারক বাদশাহ্ বা হাকিম। ৩।
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। ৪। সুদখোর ৫। পর-নিন্দাকারী ৬। অন্যায়কারী এবং
অত্যাচারী ৭। মিথ্যা সাক্ষীদাতা। ৮ বে-নামাযী। ইহাদের মধ্যে বে-নামাযীর শাস্তিই
বেশী হইবে। বে-নামাযীকে আগুনের পোশাক পড়াইয়া শিকলে বাঁধিয়া আগুনের কোড়া মারতে
থাকবে। বেহেশত তাহাকে বলতে থাকবে তুমি আমার দিকে অগ্রসর হইওনা। দোযখ তাহাকে বলবে
আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। তোমার দ্বারা আমার পেটের ক্ষুধা নিবারণ করব। এই
বলিয়া দোযখ তাহার জিহ্বা বাড়াইয়া ভিতরে নিয়া যাইবে।
নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জাহান্নাম দোযখের মধ্যে লমলম নামে একটি কুপ আছে।
উহা অসংখ্য সাপ বিচ্ছুতে ভর্তি। প্রত্যেকটা সাপ একটি পাড়ের সমতুল্য এবং একটা
বিচ্ছু হাতির সমতুল্য হইবে। সেই সমস্ত সাপ বিচ্ছু সব সময় বে-নামাযীকে কামড়াইতে
থাকিবে, একবার কামরাইলে সত্তর বৎসর পর্যন্ত তাহার
যন্ত্রনা থাকিবে এবং কাহারও মৃতু্য হইবে না।
নামাযের ফরয সমূহ
নামায আদায় করিতে হইলে কতকগুলি নিয়ম অবশ্যই পালন করিতে হইবে ।
নামাজের বাহিরে আটটি নিয়ম । ইহাকে নামাজের শর্ত বলে এবং নামাজের ভিতরে ছয়টি ফরয ।
ইহাকে রোকন বলে ।
Bayan-namaz
নামাযের শর্তসমূহ
নামাজ আরম্ভ করিবার পূর্বে যে সমস্ত কাজ অবশ্য কর্তব্য, তাহাকে নামাযের শর্ত বলে । ইহা আটটি; যথা :-
১) শরীর পাক-পবিত্র করিয়া লওয়া,
অর্থাৎ অযু কিংবা গোসলের প্রয়োজন হইলে তাহা আদায় করিয়া লইতে হইবে
।
২) পোষাক পাক হওয়া । যদি কাপড়ে কোন নাপাক বস্তু নাগিয়া থাকে তাহা
ধুইয়া পাক করিয়া লইবে অথবা উহা পরিবর্তন করিয়া পাক-পবিত্র কাপড় পরিধান করিয়া লইতে
হইবে ।
৩) স্থান পাক হওয়া -অর্থাৎ যে স্থানে দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে, তাহা পাবিত্র হওয়া ।
৪) ছতর ঢাকিয়া লওয়া – অর্থাৎ
নামায পড়িবার সময়ে পুরুষের নাভী হইতে ও স্ত্রীলোক হইলে মুখ, হাতের কব্জা ও পায়ের তলা ব্যতীত সমুদয় শরীর ঢাকিয়া লওয়া কিন্তু বাদী
হইলে পেট, পিঠ, পার্শ্ব ও নাভী
হইতে জানুর নীচ পযন্ত কাপড় দ্বারা ঢাকিয়া লওয়া ফরয ।
৫) কাবা শরীফের দিক মুখ করিয়া দাঁড়ান ।
৬) নির্দিষ্ট ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা । নিয়ত করা-যে ওয়াক্তের নামায
পড়িবে, তাহার নিয়ত করা ।
৭) তাকবীরে তাহরীমা বলা । অর্থৎ নামাজের নিয়ত করিয়া “আল্লাহু
আকবার” বলিয়া নামায আরম্ভ করা ওয়াজিব
নামাযের রোকনসমূহ সমূহ
নামায আরম্ভ করিবার পর হতে যে সকল কাজ করা ফরয, তাহাকে নামাযের রোকন বলে । ইহা মাত্র ছয়টি;
যথা :-
১) দাঁড়াইয়া নামায আদায় করা ।
২) নামাযের মধ্যে কোরান পাকের কিছু আয়াত পাঠ করা ।
৩) রুকু করা ।
৪) সিজদা করা ।
৫) শেষবারে তাশাহুদ পাঠ করা ।
৬) ইচ্ছা পর্বক কোন কাজ করিয়া নামায ভঙ্গ করিয়া লওয়া ।
ছালামের সহিত নামায ভঙ্গ করা সুন্নত । নামায আদায় করিতে গিয়া উপরোক্ত
১৪টি ফরযের কোন একেটি ভুলেও ছাড়িয়া দিলে নামায শুদ্ধ হবে না; নামায পুণরায় পড়িতে হইবে ।
নামাযের ওয়াজিব সমূহ
নামাযের মধ্যে যে সকল ওয়াজিব আছে,
ইহা থেকে কোন একটিও ভুল বশতঃ ছাড়িয়া দিলে শেষ বৈঠকে ছিজদায়ে সাহু
দিতে হবে ।
১) প্রত্যেক রাকাতে প্রথম সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ।
২) সূরাহ্ ফাতিহার পর অন্য একটি সূরাহ মিলাইয়া পড়া (বড় এক আয়াত বা
ছোট তিনি আয়াত)
৩) পরপর নামাযের রোকন গুলি সম্পন্ন করা অর্থাৎ প্রত্যেক রুকু সিজদা
করা এবং তার-তিবের প্রতি লক্ষ্য রাখা ।
৪) প্রথম বৈঠক ।
৫) আত্তাহিয়্যাতু পড়া ।
৬) নামাযান্তে ছালাম ফিরান ।
৭) দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা ।
৮) ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকআতে,
ছুন্নত ও নফল নামাযে সকল রাকআআতে সূরা ফাতিহার সহিত অন্য একটি
সূরা পড়া ।
৯) নামাযের রোকনগুলি আস্তে আস্তে আদায় করা ।
১০) যে নামায উচ্চঃস্বরে পড়িতে হয়, তাহা উচ্চঃস্বরে পড়া এবং যাহা আস্তে আস্তে পড়িতে
হয় তাহা আস্তে আস্তে পড়া ।
নামাযের সুন্নত সমূহ
১)তাকবীর বলিয়া দুই হাত কর্ণের লতি পর্যন্ত উঠান ।
২) হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা ।
৩) ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া ।
৪) ছানা পাঠ করা ।
৫) “আউযুবিল্লাহ্” পাঠ
করা ।
৬) “বিছমিল্লাহ্” পাঠ
করা ।
৭) সূরা ফাতিহা পাঠ করিবার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন”
বলা ।
৮) পুযরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য
ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধা
৯) রুকুর তাকবীর বলা ।
১০) রুকুতে দুই জানু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা ।
১১) রুকুর ভিতরে তিন,
পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা ।
১২) রুকু হইতে উঠিয়া সোজা হইয়া দাঁড়ান ।
১৩) রুকু হইতে উঠিবার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান
হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা
লাকাল হামদ” বলা ।
১৪) ছেজদায় যাইয়া দুই হাঁটু ও তাকবীর বলিয়া বসা ।
১৫) ছেজদায় তাছবীহ্ পড়া ।
১৬) পুরুষের জন্য ছেজদাহ হইতে উঠিয়া ডান পা খাড়া রাখিয়া বাম পায়ের
উপর বসা, আর
স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করিয়া ছতরের উপর বসা ।
১৭) ছেজদা থেকে উঠিয়া এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসিয়া থাকা ।
১৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা ।
১৯) দোয়ায়ে মাছুরা পড়া ।
২০) দুই দিকে ছালাম ফিরান ।
নামাযের মোস্তাহাব সমূহ
এক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র
নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান ।
তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হইতে হাতের তালু বাহির করা ।
দাঁড়াইবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা ।
বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা ।
সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কশি বন্দ রাখা ।
রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা ।
সিজদায় প্রথমে দুই জানু ও দুই হাত জমিনে রাখা, পররে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখ এবং সেজদা হইতে
উঠিবার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠাইয়া তৎপর
দুই হাত জানুর উপরে রাখিয়া বসা ।
দুই হাতের মধ্যে মস্তক রাখা,
নাক দুই বুদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা ।
হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মোখ রাখা ।
ছালাম ফিরাইতে দুই স্কন্ধের প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
সেজদায় পুরুষের পক্ষে দুই বাজু প্রথক ভাবে রাখা ও এইরূপ ভাবে উঁচুতে
রাখিতে হইবে । যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করিতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের পক্ষে
সেজদায় ইহার বিপরীত করিতে হইবে । যেমন দুই বাজু চাপিয়া রাখা এবং রানের উপর পেট
রাখা ।
তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া ।
ফযরের নামাযে প্রথম রাকআতে ত্রিশ আয়াত পাঠ করা । দ্বিতীয় রাকআতে কুড়ি
আয়াতপাঠ করা ।
জোহরের নামাজে ত্রিশ আয়াত পাঠ করা ।
আছরের নামাজে ২০ (কুড়ি) আয়াত পাঠ করা ।
মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ পাঠ করা ।
এশার নামাজে বিশ আয়াত পাঠ করা ।
নামাযের মাকরূহাত
১)চাদর বা জামা না পড়িয়া কাঁধে ঝুলাইয়া রাখা ।
২) ময়রা ধুলা-বালি লাগিবার ভয়ে কাপড় জামা গুটানো ।
৩) আঙ্গুল মটকান ।
৪) বস্ত্র শরীর অথবা দাঁড়ির সহিত খেলা করা ।
৫) এদিক ওদিক দেখা ।
৬) চুল মাথার উপরিভাগে বাঁধা ।
৭) বিনা ওজরে সেজদার স্থানের ইট-পাথর সরান ।
৮) আলস্যভরে শরীর মোড়ামুড়ি করা ।
৯) সিজদার সময়ে হাত বিছাইয়া দেওয়া ।
১০) আগের কাত।রে স্থান থাকিতে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো ।
১১) অবহেলা করিয়া খালি মাথায় নামায পড়া ।
১২) আকাশের দিকে তাকান ।
১৩) ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাপর পড়ে নামায পড়া ।
১৪) নামাযের মধ্যে কপালের মাটি মুছিয়া ফেলা ।
১৫) কোন প্রাণীর ছবি সম্মুখে ডাইনে বামে মস্তকের উপর বা কাপড়ের মধ্যে
থাকা ।
১৬) সিজদার সময়ে বিনা কারণে হাটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা ।
১৭) বিনা কারণে আসন পাতিয়া বসা ।
১৮) ফরয নামাযে এক সূরা বার বার পড়া ।
১৯) কোন মানুষের মুখের দিক হইয়া নামায পড়া ।
২০) সিজাদাতে পিঠ উভয় উরুর সহিত মিলাইয়া দেওয়া ।
২১) এক হাত বা তদুর্ধ স্থানে ইমামের দাঁড়ান ।
২২) নাক-মুখ ঢাকিয়া নামায পড়া ।
২৩) উভয় সিজদার মধ্যে অথবা তাশহুদ পড়িবার সময়ে কুকুরের ন্যায় বসা ।
২৪) দুই হাতে মাটি ভর দিয়া উঠা ।
২৫) কোন সুন্নত পরিত্যাগ করা ।
নামাযের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দ্বিপ্রহর এবং সূর্যাস্তের সময় যে কোন নামায পড়া, সিজদার তেলাওয়াত করা জায়েয নাই। যদি আছরের নামায না পড়িয়া থাকে তবে
শুধু মাত্র ঐ দিনকার আছরের নামায সূর্যাস্তের সময় পড়িতে পারিবে । তবে উহাও মাকরূহ
তাহারীমির সাথে আদায় হইবে ।
সুন্নত ও নফল নামাযের নিষিদ্ধ সময়
১) ফজরের সময় হইলে ফজরের সুন্নত দুই রাকাআত ছাড়া অন্য কোন সুন্নত বা
নফল পড়া।
২) সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায পড়ার পূর্ব পর্যন্ত ।
৩) উভয় ঈদের নামায পড়া পর্যন্ত। এই সমস্ত সময় নামায পড়া মাকরূহ ।
কাযা, জানাযা নামায, সিজদায়ে তেলাওয়াত করা জায়েয আছে ।
৪) ফরয নামাযের ইক্বামত বা জামাতের সময় ও সুন্নত বা নফল পড়া মাকরূহ ।
৫) নামাযের সময় সংকীর্ণ হইলে ওয়াক্তিয়া ফরয ব্যতীত অন্য যে কোন নামায
পড়া মাকরূহ । জুমআর খুৎবার জন্য ইমাম মিম্বরে দাঁড়াইলেই সুন্নত বা নফল পড়া মাকরূহ
।
দোয়া কুনুত
o
ইহা বিতরের নামাযে পড়তে হয়
اَللَّمُمَّ
اِنَّ
نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ
وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ
وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ
وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى
عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা ওয়ানুমিনু
বিকা ওয়ানাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর । ওয়া নাসকুরুকা আলা নাক
ফুরুকা ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা । আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা বুদু
ওয়ালাকা নুছালি্ল ওয়া নাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা
ওয়া নাখশা আজাবাকা ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মূলহিক ।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি, তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি, তোমার ভরসা করিতেছি । তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছি, তোমার উপর ঈমান আনিতেছি, তোমার ভরসা করিতেছি
তোমার গুণগান করিতেছি এবং তোমারই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি । আমরা তোমাকে অস্বীকার
করি না । যাহারা তোমার হুকুম অমান্য করে তাহাদের সঙ্গে আমরা সংশ্রব সংসগ্র
পরিত্যাগ করি । হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই
খেদমতে হাজির হই এবং তোমার রহমতের আশা করি ও তোমার শাস্তিকে ভয় করি । নিশ্চই তোমার
আজাব অবিশ্বাসিগণ ভোগ করিবে । দোয়ায়ে মাসুরা
اللَّهُمَّ
اغْفِرْ لِىْ وَلِوَ الِدَىَّ وَلِمَنْ تَوَالَّدَ وَلِجَمِيْعِ الْمُؤْ مِنِيْنَ
وَالْمُؤْ مِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالاْاَحْيَاءِ مِنْهُمْ
وَالْاَمُوْ اَتْ بِرَحْمَتِكَ يَااَرْحَمَرَّحِمِيْنَ
উচ্চারনঃ আল্লাহুমাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান তাওয়াল্লাদা
ওয়ালি জামীঈল, মু’মিনীনা
ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল
মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত, ওয়াল আহ্ইয়ায়ি মিনহুম ওয়াল
আমুয়াত, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন ।
অনুবাদঃ হে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা! আমাকে, আমার পিতা মাতাকে, সন্তান-সন্ততিকে,
সমস্ত মু’মিন পুরুষ ও নারীকে এবং
জীবিত মৃত সমস্ত মুসলিম নর-নারীকে ক্ষমা কর ।
দুরূদ শরীফ
اَللَّهُمَّ
صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَ
اهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ-
اَللَّهُمَّ
بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَ
اهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা
ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ ।
অনুবাদঃ যে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং
তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম
(আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ । নিশ্চই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং
মহামহিম । হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার
বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার
বংশরগণের উপর করিয়াছ । নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম ।
আত্তাহিয়াতু
اَلتَّحِيَّاتُ
لِلَّهِ وَالصَّلَوَاةِ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ
وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه‘ – اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ
الصَّا لِحِيْنَ – اَشْهَدُ اَنْ لاَّ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ
مُحَمَّدً عَبْدُه‘ وَرَسَوْلُه‘-
উচ্চারন: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যেবাতু
আস্-সালামু আলাইকা আইয়ু্যহান্নাবীয়ু্য ওয়া রামাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আস্-সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন
। আশহাদু আল-লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া
রাসূলুহু ।
অনুবাদ: জান এবং মাল সর্বপ্রকার ইবাদতই আল্লাহুর জন্য । হে পয়গাম্বর, আপনার উপর আল্লাহর কৃপা, বরকত এবং শান্তি বর্ষিত হইক । আমাদের উপর এবং আল্লাহর পূণ্যবান
বান্দাগণের উপর শান্তি বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কেহ উপাস্য নাই । আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, নিশ্চই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁহার বান্দা ও
রাসূল ।
জায়নামাযে দাঁড়াইয়া পড়িবার দো’আ
اِنِّىْ
وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا
مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল
আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।
অনুবাদ: নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি
মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি ।
তাকবীরে তাহরীমা
এই তাকবীরের দ্বারাই নামাজ আরম্ভ করা হয়
سُبْحَانَكَ
اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ
غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া
তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা ।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র সকল প্রশংসা তোমারই । তোমার নাম
মঙ্গলময় । তোমার মহিমা অতীব উচ্চ । তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই ।
যে সকল কারনে নামায ভঙ্গ হয়
যে সকল কাজ দ্বারা নামায নষ্ট হয,
তাহাকে “মোফছেদাতে নামাজ” বলে ।
ঐরূপ কাজ করিলে নামায পুনরায় পড়িতে হয় ।
যে কারণে নামাজ নষ্ট হইয়া যায় ।
১) নামাযের মধ্যে আজান্তে,
ভ্রমে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কথাবার্তা
বলা ।
২) কাহাকেও ছালাম করা ।
৩) ছালামের উত্তর দেওয়া ।
৪) উঃ আঃ শব্দ করা ।
৫) বেদনা অথবা শোকে শব্দ করিয়া ক্রন্দন করা ।
৬) বিনা ওজরে কান্না ।
৭) নামাযের কোন ফরয ত্যাগ করা ।
৮) ছতরের একচতুর্থাংশ পর্যন্ত কাপড় আলগা হইয়া যাওয়া ।
৯) কোরান শরীফ খুলিয়া পড়া ।
১০) নাপাক স্থানে সেজদা করা ।
১১) হাচির উত্তরে “ইয়ারহামুকুমুল্লাহ” বলা ।
১২) পানাহার করা ।
১৩) প্রত্যেক রোকনে দুইবারে অতিরিক্ত চুলকান ।
১৪) সুসংবাদে “আলহামদুলি্লল্লাহ” এবং
দুঃসংবাদে “ইন্নালিল্লা” পড়া ।
১৫) ইমামের পূর্বে মোক্তাদির কোন রোকন্ আদায় করা ।
১৬) নামাযের মধ্যে অতিরিক্ত কাজ করা ।
জায়নামাযে দাঁড়াইয়া পড়িবার দো’আ
اِنِّىْ
وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا
مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল
আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।
অনুবাদ: নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি
মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি ।
তাকবীরে তাহরীমা
এই তাকবীরের দ্বারাই নামাজ আরম্ভ করা হয়
سُبْحَانَكَ
اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ
غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া
তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা ।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র সকল প্রশংসা তোমারই । তোমার নাম
মঙ্গলময় । তোমার মহিমা অতীব উচ্চ । তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই ।
ফযরের সুন্নত দুই রাকাআতের নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ سُنَّةُ رَسُوْلُ
للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকা’আতাই সালাতিল ফাজরে সুন্নাতু রাছুলিল্লাহি তা’আলা
মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অনুবাদ: কোবালামুখী হইয়া ফযরের দুই রাকায়াত সুন্নত নামায আল্লাহর
জন্য পড়িবার নিয়ত করিলাম আল্লাহু আকবার ।
ফযরের দুই রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ فَرْضُ للَّهِ
تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকা’আতাই সালাতিল ফাজরে ফারযুল্লাহি তা’আলা
মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অনুবাঃ কোবালা মুখী হইয়া ফযরের দুই রাকায়াত ফরয নামায আল্লাহর জন্য
পড়িবার নিয়ত করিলাম আল্লাহু আকবার।
যোহরের সুন্নাত চার রাকাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْظُهْرِسُنَّةُ
رَسُوْلِ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ
اَللَّهُ اَكْبَرُ-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল জোহরে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল
মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আকবর।
যোহরের ফরয চার রাকাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْظُهْرِ فَرْضُ
اللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিজ জোহরে ফারজুল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আকবর।
যোহরের সুন্নাত দুই রাকাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِ الْظُهْرِسُنَّةُ رَسُوْلِ
للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকাআতি ছালাতিজ জোহরে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আকবর।
যোহরের নফল দুই রাকাআতের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِالْنَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى
جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকাআতি ছালাতিল নফলে মোহাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
আছরের সুন্নাত চার রাকাআত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْعَصْرِسُنَّةُ
رَسُوْلِ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ
اَللَّهُ اَكْبَرُ-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আসরি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল
মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আকবর।
আছরের ফরয চার রাকাআত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْعَصْرِ فَرْضُ
اللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আসরি ফারযুল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আকবর
মাগরিবের তিন রাকাআত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى ثَلَثَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْمَغْرِبِ فَرْضُ
اللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
সালাছা রাকায়াতি ছালাতিল মাগরিবে ফারযুল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল
কাবাতি শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
মাগরিবের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِ الْمَغْرِبِ سُنَّةُ رَسُوْ ا
الِلَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ
اَللَّهُ اَكْبَ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকায়াতি ছালাতিল মাগরিবে সুন্নাতু রাসুলল্লাহি তা’য়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতি শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
এশার চারি রাকাআত সুন্নত নামযের নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْعِشَاءِسُنَّةُ
رَسُوْلِ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ
اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল
মোতাওয়াজ্জিহান ইলা এশার চারি রাকাআত ফরয নামযের নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْعِشَءِ فَرْضُ
اللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল এশাই ফারযুল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর
বিতিরের নামাযের নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى ثَلَثَ رَكْعَتِ صَلَوةِ الْوِتْرِوَاجِبُ
اللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ
اَكْبَرُ
উচ্চারনঃ নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা
সালাছা রাকায়াতি ছালাতিল বিতরে ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
namaz14
বিতরের নামায পড়িবার নিয়ম
এশার নামায পড়িবার পর বিতরের তিন রাকাআত নামায পড়িতে হয়, ইহা ওয়াজিব। পুর্বে উল্লেখিত তিন রাকাআত বিশিষ্ট
নামাযের মত বেতরের নামায পড়িবে। তবে তৃতীয় রাকাআতে সূরায়ে ফাতিহার পর অন্য কোন
সূরা বা আয়াত পড়িয়া আল্লাহু আকবর বলিয়া উভয় হস্ত কান পর্যন্ত উঠাইয়া পুনঃ হাত
বাঁধিয়া দোয়ায়ে কুনুত পড়িবে। তারপর রুকু সিজদা ইত্যাদি যথারীতি আদায় করিয়া নামায
শেষ করিবে।
রমজান মাস ব্যতীত সকল সময়ে বিতরের নামায একা একা এবং নিঃশব্দে পড়িতে
হইবে। রমজান মাসে এই নমায জামায়েতের সাথে আদায় করা মুস্তাহাব। রমজান মাসে তারাবীর
নামায শেষে ইমাম সাহেব প্রত্যেক রাকাতেরই সজোরে কেরাতে পাঠ করিবে এবং তৃতীয়
রাকাআতে ইমাম সাহেব কেরাআত শেষ করিয়া সশব্দে “আল্লাহু আকবর”
বলিয়া কান পর্যন্ত হাত উঠাইয়া পুণরায় তাহা বাঁধিবে।
মোক্তাদিগণ চুপে চুপে শুধু ইমামের অনুকরণ করিবে। হাত বাঁধিয়া সবাই
চুপে চুপে দোয়ায়ে কুনুত পড়িবে। পরে যথাবিহিত ইমাম সাহেব রুকু, সিজাদা, তাশাহুদ,
দরূদ পড়িয়া ছালাম করিয়া নামায শেষ করিব, মোক্তাদিগহণও তাহার অসনুসরণ করিবে।
যদি কেহ দোয়ায়ে কুনুত না জানে তবে না শিখা পর্যন্ত সে দোয়য়ে কুনুতের
স্থলে নিম্নেক্ত দোয়া পড়িবে।
উচ্চারনঃ রাব্বানাআতিনা ফিদ্দুনিয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে
হাচানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অথবা, তিন
বার আয় আল্লাহ আমাকে মাফ কর, পড়িবে অথবা তিন বার
(আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ইয়ারাব্বী) অর্থৎ হে আমার পতিপালক
পড়িবে। কিন্তু সাবধান দোয়ায়ে কুনুত শিখিতে বিলম্ব মোটেও করিবে না।
কাযা নামাযের নিয়মঃ
কাযা নামায এবং ওয়াক্তিয়া নামাযের নিয়ত একই রকম তবে এইটুক পার্থক্য
যে কাযা নামাযে (আন উসালি্লয়া) শব্দের জায়গায় (আন আকদিয়া) এবং যে নামায তাহার নাম
বলিয়া (আল ফাইতাতে বলিতে হইবে। যথা- আছরের নামায কাযা হইলে নিম্নরূপ নিয়ত বলিবেঃ
نَوَيْتُ
اَنْ اَقْضِىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلَوةِ الْعَصْرِ الْفَا
ئِتَةِ فَرْضُاللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ
الْكَعْبَةِالشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা
আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা
মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
কাযা নামায পড়িবার নিয়ম
যে কোন জরুরী কারণে সময়মত নামায পড়তে না পারিলে ঐ নামায অন্য নামাযের
পূর্বে আদায় করাকে কাযা নামায বলে। কাযা নামায দুই প্রকার যথা ।
১। ‘ফাওয়ায়েতে কালীল’ অর্থাৎ
অল্প কাযা পাঁচ ওয়াক্ত পরিমাণ নামায কাযা হইলে উহাকেই ‘ফাওয়ায়েতে
কালীল’ বা অল্প কাজা বলে।
২। ‘ফাওয়ায়েতে কাছির’ অর্থাৎ
বেশি কাযা। পাঁচ ওয়াক্তের অধিক যত দিনের নামাযই কাযা হউক না কেন উহাকে ‘ফাওয়ায়েতে
কাছির’ বা অধিক কাযা বলা হয়। এ ধরনের কাযা নামায সকল
ওয়াক্তিয়া নামাযের পূর্বে পড়িবে ।
কিন্তু,
(ক) কাযার কথা ভুলিয়া গেলে অথবা
খ) ওয়াক্তিয়া নামাযের ওয়া্কত সস্কীণৃ হইয়া গেলে বা
গ) কাযা পাঁচ ওয়াক্তের বেশী হইলে কাযা নামায পরে পড়া যাইতে পারে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার কম নামায না পড়িয়া থাকিলে তাহার তরতীবের
প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে। আগের নামায আগে,
পরের নামায পরে পড়িতে হইবে। যথঃ কোন ব্যক্তির ফরজ এবং যোহরের
নামায তরক হইয়া গিযাছে; এখন আছরের নামায পড়িবার পূর্বে
সর্ব প্রথম ফজরের কাযা তারপর যোহরের কাযা আদায় করিতে হইবে। তারপর আছরের ওয়াক্তিযা
নামায আদায় করিবে।
১) ফরয নমাযের কাযা ফরয।
২) ওয়াজিব নামাযের কাযা ওয়াজিব।
৩) সুন্নত নামাযের কাযা পড়িতে হয় না। কিন্তু ফজরের সুন্নতের কাযা
আদায় করিতে হইব।
৪) কাযা নামায জামায়াতের সহিত আদায় করিলে ইমাম কেরাত জোরে পড়িবেন।
তবে যোহর এবং আছরে চুপে চুপে পড়িবেন।
৫) এক মাস বা তার চেয়ে বেশী দিনের নামায কাযা হইয়া থাকিলে উক্ত
পরিমাণ সময়ের কাযা আদায় করিবে এবং তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিবে।
৬) জীবনে যে নামায পড়ে নাই বা কত নামায তরক করিয়াছে তাহার হিসাবও
নাই। সে যদি এখন কাযা করিতে চায়, তবে প্রথমে নামাযের পূর্বে তরতীব অনুযায়ী কাযা আদায় করিতে থাকিব,
ইহাকে ‘ওমরী কাযা’ বলে।
ইহাতে অশেষ ছওয়াব আছে।
কাযা নামাযের নিয়ত করিবার সময় নামাযের উল্লেখ করিয়া নিয়ত করিতে হইবে।
জানাযা নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ
اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ
فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى
النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ
مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিললাহে তায়ালা আরবাআ তাকরীরাতে
ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিললাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু
আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম
মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।
অনুবাদঃ আমি আললাহর উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে
কেফায়া কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আললাহু তায়ালার
প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আশর্ীবাদ) আললাহ মহান।
নিয়তের মধ্যে অন্যান্য জামাতের নামাযের নিয়তের ন্যায় ইমাম তাহার
অতিরিক্ত খাছ কালাম (আনা ইমামুলেলমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু) এবং মোক্তাদিগণ
তাহাদের অতিরিক্ত খাছ কালামটি পাঠ করিলে। (একতেদাইতু বেহাযাল ইমাম) আর নিয়তের ‘লেহাযাল
মাইয়্যেতে’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে,
কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে ‘লেহাযিহিল
মাইয়্যেতে’ বলিতে হইবে।
নিয়তের পরে ছানা
سُبْحَا
نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ
ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অনুবাদঃ হে আললাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম
মংগলময় এবং তোমার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ,
তুমি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
ছানার পরে তাকবীর বলিয়া তাশাহুদের পরের দরূদ পড়িতে হয়।
দুরুদ শরীফ
اَللَّهُمَّ
صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا
هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ
بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا
هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারনঃ আললাহুম্মা সাললিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন
কামা সাললাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ।
আললাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা
ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অনুবাদঃ যে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং
তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম
(আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং
মহামহিম। হে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের
উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর
করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
জানাযার দোয়া
اَلَّهُمَّ
اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا
وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا
فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ
عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণঃআললাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা
ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আললাহুম্মা মান
আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু
আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
অনুবাদঃ হে আললাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অুপস্থিত বালকও
বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আললাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি
জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃতু্য মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃতু্য বরণ
করাইও।
লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে
اَللَّهُمَّ
اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا
شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا-
উচ্চারণঃআললাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া
যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
অনুবাদঃ হে আললাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের
পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয়
সুপারিশকারী বানাও।
লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দোয়া পড়তে হবে।
اَللَّهُمَّ
اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا
شَا فِعً وَمُشَفَّعًا-
উচ্চারণঃ আললাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া
যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
অনুবাদঃ হে আললাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের
পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয়
সুপারিশকারী বানাও। দুইহাত দুইপাশে ঝুলাইয়া ইমাম সাহেব ডানে এবং বামে ছালাম
ফিরাইবে।
জানাযা নামাজ পড়িবার নিয়ম
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাইয়া,
কাফন পরাইয়া তাহার মাগফিরাত ও পরকালে মুক্তির জন্য কতক লোক একত্র
হইয়া যে নামায পড়িতে হয়, তাহাকে জানাযার নামায বলে। এই
নামায মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া অথাৎ জানাযার সংবাদ শ্রবণকারী সকল লোকের পক্ষ
হইতেই ফরয আদায় হইয়া যায়, আর কেহই আদায় না করিলে
প্রত্যেককেই গুণাহগার হইতে হইবে।
লাশকে গোসল করাইয়া কাফন পরাইয়া একটি প্রশস্ত পবিত্র স্থানে খাটের
উপরে উত্তর শিয়রী করিয়া শয়ন করাইবে;
তারপর মৃতের যাবতীয় ঋণ ও দেনা ইত্যাদি শোধ বা মাফ করাইয়া তাহার
সন্তান বা অন্য কোন ওলী ব্যক্তি নামাযের ইমামতী করিতে মৃতকে সম্মুখে রাখিয়া তাহার
বক্ষ বরাবর দন্ডায়মান হইবেন। লাশের ওলী নিজে ইমামতী না করিলে তাহার অনুমতিক্রমে
অন্য কোন পরহেজগার আলেম ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হইবেন। ইমামের পিছনে মোক্তাদিরা তিন,
পাঁচ বা সাত এইরূপ বে-জোড় কাতারে দাঁড়াইবে। এই নামায দাঁড়াইয়া
আদায় করিতে হয়, ইহাতে কোন রুকু সিজদা বা বৈঠক ইত্যাদি
নাই। এই নামায বসিয়া পড়িলে শুদ্ধ হইবে না।
ইমাম ও মোক্তাগিণ একই সঙ্গে নিয়া কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাইয়া তাকবীরে
তাহরীমা বলিয়া হাত বাঁধিবে। ইহার পর ক্রমান্বয়ে আর ও অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলিতে
হইবে, তবে তাহাতে হাত উঠাইতে হইবে না,
বরং তাহরিমা বাঁধা অবস্থায় থাকিবে। তাকবীর ইমাম এক শব্দ করিয়া
উচ্চারণ করিবেন আর মোক্তাদিরা চুপে চুপে বলিবে।
অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি বলিবার নিয়ম এইরূপ প্রথম অর্থাৎ তাকবীরে
তাহরীমার পরে প্রত্যেকে (চুপে চুপে) ছানা পাঠ করিবে। তারপর ২য় তাকবীর বলিয়া (চুপে
চুপে) দুরুদ পাঠ করিবে তৃতীয় তাকবীর বলিয়া দরূদ পটিত হয়। তারপর তাকবীর বলিয়া সালাম
ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবে।
শবে বরাতের নামায
শাবান মাসের পঞ্চদশ তারিখের রাত্রটিকে বলা হয় শবে বরাত। শবে বরাত
আর্থ হইল বরাতের রাত্রি। এই রাত্রে জীব-জগতের আগামী বৎসরের ভাগ্য আর্থাৎ
রুজী-রোজগার এবং ভালমন্দ ইত্যাদি নির্দিষ্ট হয় বলিয়াই ইহাকে শবে বরাত বলা হয়। ইহা
একটি অত্যন্ত সার্থক নামকরণ।
এই রাতে নামাজ-কালাম,
তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার এবং কুরয়ান
তিলাওয়াত ইত্যাদি পুর্ণের কাজগুলি বেশী করিয়া আদায় করিতে হয়। যত বেশী ইবাদৎ করা যায়
ততই উত্তম। ইহার সূরা বা কেরাতে তেমন বিশেষ বাধ্য বাধকতা নাই। সূরা ফাতেহার সাথে
যে কোন সূরা দ্বারা ইহা আদায় করিতে পারে।
শবে বরাতের নামাযের নিয়ম
এই রাত্রে নামাযের রাকাত সংখ্যার কোন সুনির্দিষ্ট দলীল প্রমান নাই। এ
সম্পর্কে যে সকল বর্ণনা রহিয়াছে তাহার মর্মে কেবল এইটুকুই উপলব্ধি করা যায় যে, ইহা যত বেশী আদায় করা যায় ততই লাভ। ইহা আদায়ের
নিয়ম এই যে, এশার নামজের পরে বেতের নামায বাকি রাখিয়া এই
নামায পড়িতে আরম্ভ করিতে হয়। দুই দুই বা চার চার রাকাতের নিয়ত করিয়া ইহা আদায়
করিতে হয়। সুরা কেরাতের কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকিলেও অধিকাংশ ওলামার মতে ইহার
প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা ইখলাছ এবং দ্বিতীয় রাকাতেও ঐ একই সুরা পাঠ
করিয়া নামায আদায় করিতে হয়। অবশ্য কোন কোন আলেম বলেন যে, শবে
কদরের ন্যায় এই নামজেও প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা কদর/কাফিরুন এবং
দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে সুরা ইখলাছ পাঠ করিলা ভাল হয়।
বিভিন্ন গ্রন্থে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে যে, এই নামাযের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে একবার
সুরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে দশবার/পঁচিশবার সুরা ইখলাছ পাঠ
করিয়া প্রতি রাকাত নামায আদায় করিবে। অতপর একশতবার দুরূদ শরীফ পাঠ করিয়া মোনাজাত
করিবে।
অন্য একটি কিতাবে লেখা আছে যে,
এই রাতে বার রাকাত নফল নামায আদায় করিবে। উহার প্রথম চারি রাকাতে
প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সহিত দশবার করিয়া সুরা ইখলাছ পাঠ করিবে। তার পরবর্তী
চার রাকাতের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সহিত একবার সুরা কদর এবং পঁচিশবার সুরা
ইখলাছ পাঠ করিবে। তার পরবর্তী চার রাকাতের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে
পঞ্চাশবার করিয়া সুরা ইখলাছ পাঠ করিবে। অতপর একশতবার দুরূদশরীফ পাঠ করিয়া দুইহাত
উঠাইয়া মোনাজাত করিবে।
482089_359989400740083_2137910457_n
শবে কদরের নামায
লাইলাতুল কদ্র’ আরবি শব্দ। শবেকদর হলো ‘লাইলাতুল
কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস
দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি
একে (কুরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত
হাজার মাস (৮৩বছরেরও বেশি) হতেও উত্তম-কল্যাণময়’
সূরা আল্ কদ্র (১-৩)। এ রাতটি কোন মাসে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান এমন মাস যাতে কুরআন
নাজিল হয়েছে’ (বাকারা-১৮৫)। কুরআন অধ্যয়ন : এ রাতে পবিত্র
কুরআন নাজিল হয়েছে। তবে এর ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোন দিনের কথা উল্লেখ না করলেও
ধরে নেওয়া হয় রমজান মাসের শেষ ১০ দিন অর্থাৎ “নাজাতের
১০ দিবসের যে কোন বিজোড় দিনের দিবাগত রাতই হচ্ছে শবে-কদর । যেমনঃ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রোজা । তবে ২৫,২৭,২৯ এই দিনের উপ্র বেশি জর দেওয়া হয় । এ ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে যে,
“রমাদ্বান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলোতে
লাইলাতুল কদর তালাশ করো।”
হাদীসে বলা হয়েছে যে,
উবাই বিন কা’ব হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, “লাইলাতুল
ক্বদর সম্ভবত রমাদ্বানের ২৭তম রাতে। কারণ ঐ রাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) আমাদের নামাজে দাঁড়াতে বলতেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৬৪)
আরো বলা হয়েছে যে, “লাইলাতুল
ক্বদর রমাদ্বান মাসের ২১,২৩,২৫,২৭ এবং রমযানের শেষ রাতে খোজ করো।”
(সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস
৭৯৪)
রসূল (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) রমাদ্বানের শেষ দিনে লাইলাতুল
কদর খোজ করতেন।
(সহীহ আল-বুখারী, হাদীস
২০২০)
অপর হাদীসে আছে, “রমাদ্বানের
শেষ দশ রাতে লাইলাতুল কদর খোজ করো। তবে যদি অপরাগ হও তাহলে শেষ রাতে খোজ করো।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২১)
আরো বলা হয়েছে যে, “লাইলাতুল
কদর রমযানের শেষ সাত দিনের ভিতর রয়েছে।”
(সহীহ আল-বুখারী, হাদীস
২০১৫) সাধারণ রাতের জন্য আর এ পবিত্র রজনীতে কুরআন অধ্যয়নের ফজিলত কল্পনা করাই
কঠিন। নফল নামাজ : ন্যূনতম আট রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এ জন্য সাধারণ
সুন্নতের নিয়মে ‘দুই রাকাত নফল পড়ছি’
এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সূরা ফাতিহার সাথে
আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলালেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইয়ে ৩৩ বার সূরা আল্
কদর, ৩৩ বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লেখ করে অহেতুক জটিলতা
সৃষ্টি করা হয়েছে। হজরত আশ্রাফ আলী থানবী র:, মাওলানা
ইউসুফ ইসলাহী র: এবং এ পর্যায়ের বরেণ্য ফকিহরা এগুলো জরুরি মনে করেন না। বরং ওই
সংখ্যকবার সূরা পড়তে গেলে হিসাব মিলাতে নামাজের একাগ্রতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই
বেশি থাকে। এ ছাড়া সালাতুল তওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন।রাতের শেষ ভাগে কমপে আট রাকাত
তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর
রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়। নফল নামাজের সংখ্যার হিসাবের চেয়ে নামাজের গুণগত
দিকটির দিকে আমাদের বেশি ল রাখতে হবে। জিকির ও দোয়া : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের
অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বারবার
পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (মা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপে
১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।যাদের দিনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়
তাদের অনেকেই পক্ষেই সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করা সময়পর নয়, তাই লাইলাতুল ক্বদর শুরু হয় মাগরিবের আযানের সাথে সাথেই তাই আপনি
ইফতারির পর মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলেন। নামাজ পড়ে বাসায় এসে ১৫ মিনিট রেস্ট
নিলেন তারপর ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে কোর’আনের
১০টি আয়াত পড়লেন, আর
৫টি হাদিস পড়লেন। তারপর এশার নামাজের আগ পর্যন্ত রেস্ট নিলেন (শুয়ে শুয়ে কিছু
তসবিহ-তাহলিল পড়তে পারেন)। এশার নামাজ-তারাবীহ পড়ে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে ১০
মিনিট রেস্ট নিয়ে ৪ রাকাত নফল পড়ে ঘুমাতে গেলেন। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এতসব
নামাজ পড়ার পরও আপনার ঘুমাতে যাওয়ার সময় ১১:৩০ এর বেশী হবে না। তারপর ৩:১৫ এর দিকে
ঘুম থেকে উঠুন। উঠে আট রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে নিন। বাস! হয়ে গেল আপনার প্রতি দিনের
লাইলাতুল ক্বদরের সন্ধান। তবে অবশ্যই কেউ যদি এর চেয়ে বেশী আমল করতে পারে তাহলে
সেটা অনেক অনেক ভাল এবং বেশী পছন্দনীয়। তাই চেষ্টা করুন বেশী বেশী ইবাদত করার।
তাহাজ্জুদ নামাজ
সালাতের আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া,
রহমত, ইস্তিগফার ইত্যাদি। ইসলামে
নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সা: বলেছেন, কুফরি এবং
মুমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। নামাজ আদায়ের বহু উপকারিতা ও ফজিলত রয়েছে যেমন
: ১. আÍিক ২. শারীরিক ৩. সামাজিক ৪. পারলৌকিক।
উপরে বর্ণিত সব ফজিলত ও উপকার নফল ও ফরজ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আমরা মুসলমান। সেই হিসেবে আমাদের ফরজ নামাজ অবশ্যই পড়তে হয়। কিন্তু এমন কিছু নফল
নামাজ আছে যা পড়লে উভয় জাহানে ব্যাপক কল্যাণ অর্জন করা যায়। রাসূল সা: বলেছেন, রমজান মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য।
তাহাজ্জুদ নামাজ : তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত জাগা, ঘুম
থেকে ওঠা, এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা
ইরশাদ করেন : আর রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এটা আপনার জন্য
আল্লাহর অতিরিক্ত ফজল ও করম। আশা করা যায়, আপনার
প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাইল : ৭৯)
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত। প্রিয় নবী সা: এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন। অত্যন্ত ফজিলত ও
বরকতময় এ নামাজ। রাসূল সা: সবাইকে এ নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। তাহাজ্জুদ নামাজ
ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়নেওয়ালাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে : নিশ্চয়
মুত্তাকিরা থাকবে সেদিন প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে। উপভোগ করবে তা যা তাদের
প্রতিপালক তাদের দেবেন। কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তারা রাতের অতি
অল্প অংশ অতিবাহিত করত নিদ্রায় এবং শেষ রাতে ইস্তিগফার (তাহাজ্জুদ নামাজ) পড়ত
(সূরা জারিয়াত : ১৫-১৮) রাসূল সা: থেকে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব
সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে : রাসূল সা: বলেন, ‘ফরজ
নামাজের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ’
(মুসলিম)।
হজরত সালমান ফারসি রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: ইরশাদ করেন, তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যবস্থা করো, এটা নেক লোকদের স্বভাব, মুমিনের পরিচয়,
এটা তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। গুনাহগুলো মিটিয়ে
দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেবে। শরীর থেকে রোগ দূর করে
দেবে এবং মনে প্রশান্তি ও সম্মানজনক রিজিকের ব্যবস্থা করবে।’
(মুসলিম)। এভাবে কুরআন ও হাদিস শরিফে বহু ফজিলতের কথা বর্ণিত
আছে। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের বিশেষ মাধ্যম।
কেউ সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছতে চাইলে তাহাজ্জুদ নামাজ তাকে পড়তেই হবে। তাহাজ্জুদ
নামাজ পড়ার সময় হলো রাতের শেষ ভাগে। রাসূল সা: এশার নামাজ শেষে ঘুমিয়ে যেতেন এবং
অর্ধরাত বা তার কিছু পরে উঠে হাজাত পূর্ণ করে মিসওয়াক করে অজু করতেন এবং চার বা
বারো রাকাত নামাজ পড়তেন। তাই তাহাজ্জুদ নামাজ বারো রাকাত পড়াই উত্তম। তাহাজ্জুদ
নামাজের নিয়ত। আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামাজের নিয়ত
করছি। আল্লাহু আকবর। কাজায়েহাজাতের নামাজ : সালাতুল হাজাত বা প্রয়োজন পূরণের জন্য
নামাজ। আমরা মানুষ। জীবন চলার বাঁকে বাঁকে হাজারও সমস্যায় আমরা উপনীত হই। তখন সেই
সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র দাতা হলেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। আমাদের সব
সমস্যা তার কাছেই বলতে হয়। তাই উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে দুই রাকাত নামাজ পড়াকেই
সালাতুল হাজাত বলে। রাসূল সা: সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজের শিক্ষা দিয়েছেন এবং নিজে
পড়েছেন। নিয়ত : আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত সালাতুল হাজাত
নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবর। নামাজ শেষ করে নিজের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা
চাইতে হয় এবং নিজের নেক ইচ্ছার কথা আল্লাহর কাছে বলতে হয়। তওবার নামাজ : কারো থেকে
কোনো পাপকাজ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ পবিত্রতা অর্জনের জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়া এবং
নামাজ পড়ার পর অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত
হবে এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য পাকাপোক্ত ইরাদা করবে। তাহলে দয়াময় আল্লাহ তাকে
ক্ষমা করবেন এই নামাজকে সালাতুত তাওবা বলে। এই নামাজ পড়ার আগে গোসল করে নেয়া
উত্তম। সর্বশেষ একটি বিশেষ সালাতুল হাজাত নামাজের আলোচনা করব। তবে অন্য নামাজের
সাথে এর নিয়মের পার্থক্য আছে। এই নামাজ পড়ার নিয়ম। তাহাজ্জুদ নামাজকে জরুরী করে
দেয়া হয়নি মানুষের উপর কঠিন হয়ে যাবে বলে। তবে, রাসুল
(সাঃ) যেহেতু, সর্বদা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন অতএব,
এটার গুরুত্ব অপরিসীম। সম্ভব হলে পড়ার চেষ্টা করা উচিত। তবে,
তা না পড়লে কোন গুনাহ হবে না।
নিয়মঃ নামাজের প্রথম রাকাতের সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন ১০ বার
এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১১ বার পড়তে হয় আর বাকি সব কিছু
তথা রুকু সিজদা অন্য নামাজের মতোই। এভাবেই দুই রাকাত নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে
দাঁড়িয়ে যাবেন এবং সোজা সিজদায় চলে যাবেন। সিজদায় গিয়ে ১০ বার সুবহানাল্লাহী ওয়াল
হামদুলিল্লাহী ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, এই দোয়া পড়বেন; ১০ বার
যেকোনো দরুদ শরীফ পড়বেন এবং ১০ বার রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতও ওয়াফিল
আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার। এই দোয়া পড়বেন। অত:পর দাঁড়িয়ে যাবেন এবং
পরে বসে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাইবেন। এই নামাজ অনেক ফজিলতময়। বহু
ওলি-আউলিয়াগণ এই নামাজ পড়েছেন। বুজুরগানে দ্বীন এই নামাজ সম্পর্কে বলেন, মধু খেলে মিষ্টি লাগবে এই কথা যেমন সত্য তেমনি এই নামাজ পড়ে দোয়া করলে
কবুল হবে, এটাও সত্য।
সালাতুত তাসবীহঃ
সালাতুত তাসবীহ নফল নামাজ। এটা চার রাকাত বিশিষ্ট্য নামাজ। প্রতি
রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে সুরা মিলিয়ে “সুবহানাল্লাহি ওয়াল
হামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার”
১৫ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে ১০ বার, সিজদায় ১০ বার,
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে ১০ বার, আবার
সিজদায় গিয়ে ১০ বার, এরপর সিজদাহ থেকে উঠে ১০ বার। এভাবে
হল একরাকাতে ৭৫ বার। এভাবে প্রতি রাকাতেই পড়তে হবে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, হাদিসটি সহীহ)
তাই আসুন এই পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি ভাল ভাল কাজ,দান-খয়রাত,রমজানের ফযীলত
ও নফল ইবাদত করি।
আজ এই পর্যন্তই ।সবাই ভাল থাকেন ।