হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম) কাহিনী

হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম)

আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) পর্যন্ত দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল। যার শেষদিকে ক্রমবর্ধমান মানবকুলে শিরক ও কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে নবী ও রাসূল করে পাঠান। তিনি সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন পথভোলা মানুষকে পথে আনার জন্য দাওয়াতে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর গযবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপরে আরও কয়েকটি কওম আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে পরপর ধ্বংস হয়। এভাবে পৃথিবীতে আদি যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি জাতির ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মাধ্যমেই জগদ্বাসী তাদের খবর জানতে পেরেছে। যাতে মুসলিম উম্মাহ ও পৃথিবীবাসী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। উক্ত ৬টি জাতি হ’ল- কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত, মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। অবশ্য কুরআনে এ তালিকায় কওমে ইবরাহীমের কথাও এসেছে (তওবাহ ৯/৭০)। যদিও তারা একত্রে ধ্বংস হয়নি। তবে ইবরাহীমের ভাতিজা লূত-এর কওম একত্রে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। আমরা এখানে প্রথমে নূহ (আঃ) ও তাঁর কওম সম্পর্কে আলোচনা করব।

নূহ (আঃ)-এর পরিচয় :

‘আবুল বাশার ছানী’ (ابوالبشرالثانى ) বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত নূহ (আলাইহিস সালাম) ছিলেন পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। তিনি ছিলেন দুনিয়াতে ১ম রাসূল।[1]

নূহ (আঃ)-এর চারটি পুত্র ছিলঃ সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেন‘আন।[2] প্রথম তিনজন ঈমান আনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফের হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়। নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতে তাঁর কওমের হাতেগণা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। নূহের কিশতীতে কয়জন ঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাত পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কুরআনে বা হাদীছে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। অমনিভাবে কিশতীটি কত বড় ছিল, কিভাবে ও কত দিনে তৈরী হয়েছিল, এসব বিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হ’ল ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ। যার সঠিক কোন ভিত্তি নেই।[3] ইমাম তিরমিযী হযরত সামুরা (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে সূরা ছাফফাত ৭৭ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, নূহের প্লাবন শেষে কেবল তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণই অবশিষ্ট ছিল।[4] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন যে, سام أبو العرب وحام أبو الحبش و يافث أبو الروم. ‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’।[5]ইবনু আববাস ও ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী মানব জাতি সবাই নূহের বংশধর’।[6]

আল্লাহ বলেন, وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِيْنَ. ‘আমরা তার (নূহের) বংশধরগণকেই অবশিষ্ট রেখেছি’ (ছাফফাত ৩৭/৭৭)। ফলে ইহুদী-খৃষ্টান সহ সকল ধর্মমতের লোকেরা নূহ (আঃ)-কে তাদের পিতা হিসাবে মর্যাদা দিয়ে থাকে। সাম ছিলেন তিন পুত্রের মধ্যে বড়। তিনি ছিলেনأبو العرب বা আরব জাতির পিতা। তাঁর বংশধরগণের মধ্যেই ছিলেন হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক এবং ইসমাঈলের বংশধর ছিলেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)। ইসহাকের বংশধরগণের মধ্যে ছিলেন ইয়াকূব, ইউসুফ, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, ইউনুস, ইলিয়াস, ঈসা প্রমুখ নবী ও রাসূলগণ। হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণের নিকটে প্রেরিত নবীগণের নাম জানা যায়নি। তবে আরবদের মধ্যকার চারজন নবী ছিলেন হূদ, ছালেহ, শু‘আয়েব ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)।[7] অধিকাংশ ছাহাবীর মতে নূহ (আঃ) ছিলেন ইদরীস (আঃ)-এর পূর্বেকার নবী।[8] তিনিই ছিলেন জগতের প্রথম রাসূল।[9] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত প্রাপ্ত হন এবং মহাপ্লাবনের পর ষাট বছর জীবিত ছিলেন।[10] ফলে সুদীর্ঘকাল যাবত তিনি নবী হিসাবে শিরকে নিমজ্জিত হঠকারী কওমকে দাওয়াত দেন। প্লাবনের পর তাঁর সাথে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয় এবং তাদেরকে তিনি সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয়।

আদম (আঃ) ৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন[11] এবং নূহ (আঃ) ৯৫০ বছর জীবন পেয়েছিলেন (আনকাবূত ২৯/১৪)। উল্লেখ্য যে, আদম ও নূহ (আঃ)-এর দীর্ঘ বয়স আল্লাহর বিশেষ দান ও তাঁদের মু‘জেযা স্বরূপ ছিল। নূহ (আঃ)-এর পুরুষানুক্রমিক বয়স তাঁর ন্যায় দীর্ঘ ছিল না। নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যতঃ সভ্য হ’লেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[12]

তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা :

আদম (আঃ)-এর সময়ে ঈমানের সাথে শিরক ও কুফরের মুকাবিলা ছিল না। তখন সবাই তওহীদের অনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল (বাক্বারাহ ২/২১৩)। তাঁর শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই ছিল পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্য শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে। নূহের কওম ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব ও নাস্র প্রমুখ মৃত নেককার লোকদের অসীলায় আখেরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের পূজা শুরু করে। এই পূজা তাদের কবরেও হ’তে পারে, কিংবা তাদের মূর্তি বানিয়েও হ’তে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়েস বলেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত’।[13] আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।

প্রসংঙ্গ : নুহু আ: এর কিস্তি বা নৌকা

পূর্ব ইতিহাস:– পৃথিবীর প্রথম ও আদি পিতা হযরত আদম আ: কে আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম মানবকে নবী হিসাবে প্রেরন করেন। পৃথিবীতে যে জিনিসের বেশী প্রয়োজন হবে তা সর্বপ্রথমই আল্লাহ পাক প্রেরন করেছেন। তা হলো নবী । কারন আল্লাহ পাক পৃথিবীতে মানব জাতীকে তার প্রতিনীধি করে প্রেরন করবেন যা হযরত আদম আ: কে সৃষ্টির সময়ই ফেরেশতাগনের সামনে আল্লাহ পাক প্রকাশ করেছেন। তাই প্রথম মানবকে নবী করে সৃষ্টি করেছেন। নবীগনের আবির্ভাব ভ্রান্ত পথের মানুষকে সত্য পথের সন্ধ্যান দেয়ার জন্য। মানব জাতী পৃথিবীর বুকে আসলে দৃশ্যমান বস্তুকে দেখে অদৃশ্য বস্তু আল্লাহ, আখেরাত , জান্নাত , জাহান্নামকে ভূলে যাবে। তাই যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী রাসুলগনকে পাঠিয়ে পথহারা মানুষকে সত্য পথের সন্ধ্যান আল্লাহ পাক দান করেন। ইহা মহান আল্লাহ পাকের অসীম কৃপা বা দয়া। কোন জাতিকে এপর্যন্ত আযাব দেননি যতক্ষন না সেই জাতির নিকট নবী রাসুল প্রেরন করে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন।

(২) নুহু আ: এর জমানা:—- হযরত নুহু আ: একজন নবী ছিলেন। তিনি প্রায় ৯৫০ বৎসর কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে মাত্র ৭০-৮২ জন লোক আল্লাহ পাকের উপর ঈমান এনেছেন। বাকী লোকেরা ঈমানতো আনেনি বরং নুহু আ: কে তিরস্কার করেছিল। নুহু আ: ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে অবশেষে আল্লাহ পাকের নিকট তার কওমের উপর আযাব নাজিলের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ পাক তার দোয়া কবুল করেন। এবং দিন তারিখের নমুনাও বলে দেন। যেদিন দেখবে চুল্লির মধ্য থেকে পানি উঠিতেছে তখন প্লাবন শুরু হবে। তবে তার পূর্বে একটি কিস্তি বা নৌকা নির্মান করার জন্য নির্দেশ দেন। তার মধ্যে প্লাবনের সময় যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে এবং প্রতিটি প্রানীর জোড়ায় জোড়ায় ঐ কিস্তিতে তোলার জন্য নির্দেশ দিলেন। ইতিমধ্যে প্লাবনের কথা শুনে এক বৃদ্ধা মহিলাও ঈমান এনেছিল। আল্লাহ পাকের নির্দেশ মোতাবেক নুহু আ: কিস্তি বা নৌকা নির্মান শুরু করে দিলেন। সাথে সাথে তার কওমের নিকট ঈমান না আনলে প্লাবনের সতর্কতাও জানিয়ে দিলেন। কিন্তু কওমের লোকেরা আরো তিরস্কার বৃদ্ধি করে দিল। এবং বললো যে, কোথায়ও পানি নেই । এই মরুভূমিতে কিভাবে প্লাবন হবে ?
নুহু আ: তার কিস্তি নির্মান শেষ করলেন। অতপর কাফেররা এসে তিরস্কার ছলে তার নির্মিত কিস্তির ভিতরে দলে দলে এসে পায়খানা করে পূর্ন করে ফেললো। নুহু আ: এই দৃশ্য দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। আল্লাহ পাক তাকে অভয় দিয়ে বললেন নুহু তুমি কোন চিন্তা করোনা দেখ আমি আল্লাহ কি করতে পারি। ঐ কিস্তিতে সর্বশেষ যে পায়খানা করার জন্য গেল সে ছিল কুষ্ট রোগগ্রস্থ এক বুড়ি। বুড়ি ঐ কিস্তির মধ্যে পায়খানা করতে গিয়ে ঐ পায়খানা মধ্যে পড়ে বুড়ি ডুবে গেল। পায়খানার মধ্যে গোছল করে বুড়ি উপরে উঠে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দেহে কোন কুষ্ট রোগতো নেই বরং সে ১৬ বৎসরের যুবতির ন্যায় তার চেহারা হয়ে গিয়েছে। বুড়ি এই পায়খানাকে বরকতময় ও রোগের শেফা মনে করে তার লোটায় করে পায়খানা ভর্তি করে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করলো। গোত্রের সকলে বুড়িকে দেখে হতবাক। সকলে বললো, বুড়ি তোমার কুষ্ঠরোগ কিভাবে ভাল হলো ? এবং তুমিই বা কিভাবে পূনরায় যুবতী হলে ? বুড়ি সব ঘটনা খুলে বললো। শুনে সকল কাফেরা দলে দলে যার যার যত লোটা বাটি ছিল সব ভর্তি করে কিস্তির সমস্ত পায়খানা এমনভাবে পরিস্কার করলো যে কিছুই বাকী রহিল না। সবশেষে যারা আসলো তার পায়খানা না পেয়ে পানি দিয়ে এমন ভাবে কিস্তিটা ধৌত করে পানি নিল যে কিস্তিটি পূর্বের তুলনায় ভালোভাবে পরিস্কার হলো।
এবার নির্ধারীত দিনে এক চুল্লির ভিতর থেকে পানি উঠতে শুরু করলো । নুহু আ: বুঝলেন অাল্লাহ পাকের আযাব এসে গেল। নুহু আ: কিস্তির মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে এবং প্রতিটি প্রানীর জোড়ায় জোড়ায় কিস্তিতে তুললেন। প্লাবন শুরু হয়ে গেল। দীর্ঘ ৪০ দিন পর্যন্ত প্লাবন। সমগ্র বিশ্বময় প্লাবন ঈমানদার ব্যতিত সমস্তকিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। এদিকে নুহু আ: এর এক ছেলে ঈমান আনেনি। প্লাবনের সময় কিস্তিতে উঠার চেষ্টা করলে আল্লাহ পাক নুহু আ: কে সতর্ক করে দেন যে ঐ ছেলে ঈমান আনেনী যদি তাকে কিস্তিতে তোলা হয় তাহলে নবুওয়াতি খাতা থেকে তার নাম কর্তন করা হবে। নুহু আ: আর তার ছেলেকে কিস্তিতে তুললেন না। নুহু আ: ঐ বুড়িমার কথা ভুলে গিয়েছিলেন কিস্তিতে তুলতে। প্লাবন শেষে কিস্তি এসে মাটিতে লাগলো । নুহু আ: জমিনে নেমে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে দেখেন সুদুরে মিট মিট করে এক গৃহে আলো জ্বলতেছে। নুহু আ: আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এগিয়ে দেখলেন সেই বুড়ি যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে। তিনি প্লাবনের সময় তাকে কিস্তিতে তুলতে ভূলে গিয়েছিলেন। বুড়ি বললো হে নুহু কখন প্লাবন আসবে। নুহু আ: আশ্চ্যর্য হয়ে গেলেন। দীর্ঘ ৪০ দিন যাবৎ প্লাবন হয়ে গেল কিন্তু বুড়ি তা বলতেই পারছে না। তার গৃহ, গবাদি পশু, পাকঘর সব ঠিকঠাক আছে। বুড়ি দীর্ঘ ৪০ দিন যাবৎ স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন। নুহু আ: আল্লাহ নিকট ছেজদায় পড়ে গেলেন। এবং তার মহিমার শোকরিয়া আদায় করলেন।

নুহু আ: এর এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য যা নছিহৎ :—–

(১) দ্বীনের দাওয়াত কবুল না করলে সেই গোত্রের উপর আল্লাহ পাকের আযাব চলে আসে। সেই আযাব এক এক যুগে এক এক রকম হতে পারে। বর্তমান জামানায়ও আযাব আসছে বিভিন্ন ভাবে যা শুধু ঈমানদারগনই অনুভব করতে পারে। বেঈমান ও নাফরমানর উহা প্রাকৃতিক দূর্যোগ বলে পাশ কাটিয়ে যায়।
(২) আল্লাহ পাক যা করতে ইচ্ছা পোষন করেন তা কেউ রুখতে পারেনা। মরুভূমির মধ্যেও প্লাবন দিতে পারেন।
(৩) ঈমানদারগনের বিরোধীতা করে কেউ পার পাবে না। নুহু আ: কিস্তি তৈরী করেছেন। কাফেররা তা তিরস্কার করেছিল। পায়খানা করেছিল। আল্লাহ পাক তার কুদরত খাটিয়ে ঐ কাফেরদেরকে দিয়েই কিস্তি পরিস্খারের ব্যবস্থা বেইজ্জতির সহিত করেছেন।
(৪) নুহু আ: এর সন্তান হয়েও বেঈমান হওযার কারনে প্লাবনের সময় আল্লাহ পাকের সাহায্য পায়নি।
(৫) ঈমান আনার পর বিপদের মধ্যে রেখেও আল্লাহ পাক হেফাজত করতে পারেন যেভাবে বুড়িকে প্লাবনের মধ্যে রেখেও হেফাজত করে দেখিয়েছেন।
(৫) আল্লাহ পাকের দ্বীনের বিরোধীতা করা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। দুনিয়া ও আখেরাতে নিজের ক্ষতি নিজে ডেকে আনা।
(৬)আল্লাহ পাক কিছু করার জন্য কোন মাখলুকের মোহতাজ না। ইহাই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর মর্মার্থ।
(৭)নবী গনের দোয়া রদ হয় না অর্থাৎ আল্লাহ পাক কবুল করেন। যেমন নুহু আ: এর দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেছেন।
(৮)বর্তমান জামানায়ও নুহু আ: এর গুনগতমানে একটি কিস্তি সাড়া বিশ্বময় দাওয়াতে তাবলীগ নামে চলছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে । যারা এ্ই কিস্তিতে উঠবে আল্লাহ পাক তাদেরকেও নহু আ: এর ঈমানদারগনের ঈমানের ন্যায় বর্তমান জমানার ঈমানদাগনের ঈমানকে হেফাজত করে ঈমান নছিব করে মৃত্যুবরন করে জান্নাতের হকদার আল্লাহ পাক করে দিতে পারেন।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নুহু আ: ঘটনা থেকে নিজের ঈমান আমলকে মজবুত করা তথা কাফের, মোশরেক ও বেঈমানদেরও নছিহৎ গ্রহন করা এবং সময় থাকতে ঈমান নিয়ে আসা। যাতে করে আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারে।

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Affiliate Network Reviews